জননেতা পীর হবিবুর রহমান ‘স্মরণে আবরণে’

22

গোলজার আহমদ

সিলেট জেলায় জন্ম নেওয়া শোষিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের কিংবদন্তী জননেতা পীর হবিবুর রহমানের আজ (১৬ ফেব্র“য়ারি শনিবার) ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য, কোন বিশেষ এলাকার জন্য নয়, সারা দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া এই মানুষটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কৃষক-শ্রমিক নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ভূখা-নাঙ্গা মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে পুঁজিবাদী প্রথার বিরুদ্ধে সাম্যবাদ প্রজ্জ্বলন করেছেন। যত বারই এই বাংলায় নিপীড়ন-নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতা এসেছে, ততোবারই এই যন্ত্রণাকাতর মানুষটি গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে নীতি ও শাস্ত্রের মন্ত্র কথা উচ্চারণ করে মানুষের মনুষত্ব ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন আপন মহিমায়। বরেণ্য অন্যান্য রাজনীতিবীদদের সাথে পীর হবিবুর রহমানের পার্থক্য এই যে, তিনি ছিলেন ইতিহাসের নেপথ্য নায়ক। প্রচারবিমুখ শুধু নন, তিনি যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তা প্রকাশেও তাঁর সংকোচ ছিল অপরিসীম। পীর সাহেব অত্যন্ত সহজ সরল জীবন-যাপন করতেন। তাঁর পোষাক-পরিচ্ছদ ছিল অত্যন্ত সাদাসিদে। তিনি সব সময় পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরিধান করে সভা-সমিতিতে যোগদান করতেন। এমনকি লুঙ্গি পড়েই দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বরেণ্য জাতীয় রাজনৈতিক পীর হবিবুর রহমান ছিলেন এদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম, বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের এক লড়াকু প্রাণপুরুষ। তিনি প্রাচীন পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন ও ধর্মীয় পরিবেশে তাঁর প্রাথমিক জীবন কেটেছে। মাদ্রাসায় শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ধর্মের কোন সংকীর্ণ প্রয়োগ তিনি করেননি। তিনি তাঁর অবস্থান থেকে দেখেছেন ধর্ম্বান্ধতাকে সব সময় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র নিজেদের শ্রেণি স্বার্থে শোষণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি বলতেন জনপ্রিয়তা ও প্রগতিশীল সব সময় এক জিনিষ নাও হতে পারে। অনুন্নত সমাজে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়। কিন্তু কোন মতেই প্রগতিশীল নয়, বরং প্রতিক্রিয়াশীল। তাই তিনি উদারভাবে সমাজ রূপান্তরের পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। সমাজে বৈষম্য অবহেলা ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নে বিভোর পীর হবিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তি ফৌজের অন্যতম পুরোধা হিসেবে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনীতি করেছেন স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, সমাজ প্রগতির জন্য, শোষণ মুক্তির জন্য। ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামে, পাকিস্তান আমলে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিটি গণসংগ্রামে এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন এক অক্লান্ত যোদ্ধার ভূমিকায়। আজ বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটকালে পীর হবিবুর রহমান মতো একজন দেশপ্রেমিক, জনদরদী নেতার প্রয়োজনীয়তা দেশবাসী বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তি বিশেষভাবে অনুভব করছে।
আমাদের আজ শঠ প্রতারকদের পলিটিক্সের দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হয়ে সুস্থ রাজনীতির ধারা গড়ে তুলতে হবে। “জাতীয় সংকট মুছন ও মুক্তিযুদ্ধের চেনতার ধারায় দেশ গড়ার লক্ষ্যে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি এক হও।” জীবনের শেষ দিনগুলোতে এই লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শের উত্তরাধিকার প্রজান্মন্তরে সাথী ও বন্ধুদের বলবো আসুন আমরা যারা প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারা পীর হবিবুর রহমানের আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি। পীর হবিবুর রহমান অমর হোক।