মাদক বিরোধী অভিযানে সফল হউক

76

মাদক এখন আর কোনো বিশেষ শহর বা বিশেষ শিল্প এলাকার সমস্যা নয়, এটি এখন সারা দেশেরই প্রধান সমস্যা। গ্রামাঞ্চলেও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের মাদক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। সারা দেশে অভিভাবকরা আজ এক অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। অনেক জায়গায় মাদকের হাট-বাজার বসছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে একটি প্রজন্ম পুরোপুরি ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে। ধসে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি। পত্রপত্রিকায় দেশ ধ্বংসের এই আয়োজন নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। অবশেষে রাষ্ট্র যেন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। মোটামুটি ব্যাপকতা নিয়ে শুরু হয়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। গত কয়েক দিনে হাজারের বেশি মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক মামলা হয়েছে। মাদক বিক্রেতাদের ধরতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের মুখেও পড়তে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। এ রকম বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা মারাও গেছে। জানা যায়, পরিস্থিতি বিরূপ বিবেচনা করে মাদকের গডফাদার বা মূল হোতারা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। যেকোনো মূল্যে এদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অন্য অনেক অপরাধের সূতিকাগার হচ্ছে মাদকের বিস্তার। অনেক দেশই মাদকের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের বাস্তবতায়ও আমরা মাদকের বহুমুখী কুফল প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছি। তাই একে যেকোনো মূল্যে রুখতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। এবার মাদকের হাত থেকেও দেশকে উদ্ধার করব।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে আন্তরিকতা রয়েছে, আমরা তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি। সংগত কারণেই আশা করছি, মাদকবিরোধী অভিযান এবার সফলতা খুঁজে পাবে। এই অভিযান সফল করতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। সে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। আমরাও আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আন্তরিকতা এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় এবারের মাদকবিরোধী অভিযান সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে যাবে।
মাদক বাণিজ্যে বহু ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীর জড়িত থাকার তথ্য বহুবার বহুভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, আমলা, এমনকি পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় জমে ওঠা হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশের সোর্স হিসেবে কথিত কিছু ব্যক্তি। অভিযোগ আছে, তাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার লাভের বড় অংশই চলে যায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ হোতাদের পকেটে। সবার আগে এই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। তা না করে শুধু কিছু খুচরা কারবারিকে শাস্তি দিলে অভিযান সফল হবে না। জানা যায়, দেশে বর্তমান মাদকাসক্তির অর্ধেকেরও বেশি ইয়াবাজনিত। ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে, চোরাপথে। এই পথ বন্ধ করতে হবে। আইনের দুর্বলতা, দ্রুত জামিন পাওয়া এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও অনেক লেখালেখি হয়েছে। মাদক থেকে মুক্তি পেতে এদিকেও মনোযোগ দিতে হবে। আমরা চাই, এবারের মাদকবিরোধী অভিযান সর্বাঙ্গীণভাবে সফল হোক।