হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বোরো ধানও ৭৫ শতাংশের মতো কাটা হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি ২৫ শতাংশের ধানও কাটা হয়ে যাবে। অথচ এখনো সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি। নানা কারণে কৃষকদের পক্ষে ধান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এই সুযোগে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা অত্যন্ত কম দামে ধান কিনে নিচ্ছে। সরকার যেখানে ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে মণপ্রতি এক হাজার ৪০ টাকা, সেখানে ফড়িয়ারা এখন ধান কিনছে ধানের জাতভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। অথচ এক মণ ধানের উৎপাদন খরচই পড়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। তাই ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারের সংগ্রহ অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করা। জানা যায়, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির গত ৮ এপ্রিলের সভায় নির্ধারিত হয়েছিল, ধানের সংগ্রহ মূল্য হবে কেজিপ্রতি ২৬ টাকা এবং ২ মে থেকে এই সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে। অথচ ১৮ মে পর্যন্ত কোথাও সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। এই বিলম্বের কারণে বেশির ভাগ কৃষক তাদের বিক্রিযোগ্য ধানের বেশির ভাগই অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে এবং দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের এমন দুর্গতি কেন? এখন বা আরো কয়েক দিন পরে যদি এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনা হয় তাতে কারা লাভবান হবে? নিশ্চয়ই ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাদের লাভবান করার দিকে সংগ্রহ অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এত আগ্রহ কেন? কেউ কেউ মনে করেন, এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভবান হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় সংগ্রহকারীরাও লাভবান হয়। কিন্তু এতে সরকারের আসল উদ্দেশ্য যে ব্যাহত হয় সেদিকে কেউ নজর দেবে না কি? শুধু দাম নয়, সংগ্রহ অভিযানের এলাকাভিত্তিক ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। হাওর অধ্যুষিত এলাকা কিশোরগঞ্জে বোরো ধান তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। এ বছর হাওরগুলোতে ধানের যে বাম্পার ফলন হয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে এই জেলায় চাল উৎপাদিত হবে প্রায় সাত লাখ টন। অথচ এই জেলায় সরকারের চাল কেনার টার্গেট ধরা হয়েছে মাত্র সাত হাজার টন, অর্থাৎ মোট উৎপাদনের ১ শতাংশ মাত্র। পাশের ময়মনসিংহ জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার টন।
হাওরাঞ্চলে শুধু কৃষক নয়, কৃষি শ্রমিকরাও ধান বিক্রি করে। কারণ মজুরি হিসেবে তাদের ধান দেওয়া হয়। একেকজন শ্রমিক মৌসুমে ৫০-৬০ মণ ধানও পেয়ে থাকে। তাদের পক্ষে ধান ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। সংগ্রহ অভিযান বিলম্বিত করে নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে এভাবে বঞ্চিত করা অত্যন্ত অমানবিক কাজ, যা প্রায় প্রতিবছরই ঘটে থাকে। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত সংগ্রহ অভিযান শুরু করে উৎপাদক পর্যায়ের হতাশা কিছুটা হলেও কাটাতে চেষ্টা করবে।