ট্রেনে চলাচল বিষয়ে আমাদের দেশে একটি কথা অনেক দিন ধরে চালু রয়েছে ‘নয়টার গাড়ি কয়টায় ছাড়ে’। প্রান্তিক স্টেশন থেকে ছাড়তে বা পথে বিলম্বজনিত কারণে পরবর্তী স্টেশনগুলোতে ট্রেন যথাসময়ে পৌঁছে না বলে এ কথা চালু হয়েছে। সড়কপথের জন্য এ কথা প্রযোজ্য ছিল না কয়েক বছর আগেও। এখন বাসে-কারে চলার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। চার লেনের মহাসড়ক হওয়ার পরও সময় মেপে চলা সম্ভব হচ্ছে না।
নির্মাণকাজের জন্য লেন বন্ধ রাখা, প্রবল বৃষ্টিতে সড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়া, মহাসড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, মহাসড়কের ওপর হাট-বাজার, লেভেলক্রসিং, ফেরি পারাপার, শহর-গঞ্জের জ্যামে পড়া, ভিড়প্রবণ এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ না থাকা প্রভৃতি কারণে মহাসড়কগুলো ‘মহাস্থবির’ দশায় পৌঁছেছে। এসব জটিলতা থেকে কোনো মহাসড়ক মুক্ত নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও নয়। দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রায়ই স্থবিরতা নেমে আসে। গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। রুটের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছতে লাগছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। টানা তিন দিন ধরে যানজটে অচল এ মহাসড়ক। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যানজট নিরসনের দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
এ পরিস্থিতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ মহাসড়ক দিয়ে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। চলাচলকারী যানবাহনের ৬০ শতাংশই পণ্যবাহী। কয়েক দিন পর রমজান মাস শুরু হচ্ছে। যানজটের কারণে রমজান উপলক্ষে পণ্য সরবরাহে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ১৩৯ কিলোমিটারে যানজট ছিল। ফেনী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা পড়ে ছিল। যাত্রী ও চালকদের কী দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তা অনুমেয়। ২০১৬ সালে চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে বা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে গড়ে সময় লাগত পাঁচ ঘণ্টা। দুই বছরেই মহাসড়কটি বেহাল। মূলত এ কারণেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
সওজের হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনে গড়ে ২৫ হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যান চলাচল করে। এ সংখ্যা বর্ধমান। টোল প্লাজার হিসাব অনুযায়ী, দিনে চলাচল করছে ৩০ হাজারের বেশি যান। এমন একটি ব্যস্ত সড়কে এমন অবস্থার কারণে ঢাকার ট্রাকচালকরা ট্রিপ নিতে চাচ্ছেন না। এ মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন জেলায় বাস-মিনিবাস চলাচল প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আন্তনগর ট্রেনে অতিরিক্ত বগি জোড়া হয়েছে, তাতেও কাজ হচ্ছে না। কিভাবে এ মহাসড়কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা যায়, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।