কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের আজ ১৯তম দিবস। আগামীকাল শেষ হচ্ছে মাগফিরাতের প্রতিশ্রুত মধ্যম দশক। একই সঙ্গে আগামীকাল দিনের অবসানে ঘরে ঘরে ও মসজিদে মুমিন মুসলমানরা ইতিকাফের মাধ্যমে বরণ করে নেবেন নাজাতের দশককে। আল্লাহপাকের কাছে নিজেদের ইহকাল পরকালের জন্য ক্ষমাসুন্দর জীবনের প্রত্যাশা করার এখনই সময়। হায়াত একটি বড় নেয়ামত। আল্লাহ আমাদের উত্তম কাজ করার জন্য তার অপরূপ নিয়মে এ মূল্যবান হায়াত বা জীবন উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আমরা অনেকে সময়মতো এর মূল্য দেই না। মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন- হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও তবে (ভেবে দেখ) আমি তোমাদের মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট মাংসপি- থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য। আর আমি এক নির্দিষ্টকালের জন্য মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদের শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়, আবার তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায়, এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভীদ উৎপন্ন করে। সূরা হজ্ব, আয়াত ৫।
এ আয়াতের মহাবৈশিষ্ট্য হলো সফর অবস্থায় এটি অবতীর্ণ হলে রাসূল (স.) উচ্চৈঃস্বরে এর তিলাওয়াত শুরু করেন। সফরসঙ্গী সাহাবায়ে কেরাম তার তিলাওয়াত শুনে এক জায়গায় সমবেত হয়ে গেলেন। তিনি সবাইকে সম্বোধন করে বললেন- এ আয়াতে উল্লেখিত কেয়ামতের ভূকম্পন কবে হবে তোমরা জান কী? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূল (স.) বললেন, এটা সেই দিন হবে যখন আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে সংবোধন করে বলবেন- যারা জাহান্নামে যাবে তাদের ওঠাও। আদম (আ.) জিজ্ঞাসা করবেন, কারা জাহান্নামে যাবে? উত্তর হবে প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময়েই ত্রাস ও ভীতির আধিক্যে বালকেরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে ভিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাদের মধ্যে কে মুক্তি পেতে পারে? তিনি বললেন, তোমরা নিশ্চিত থাক। যারা জাহান্নামে যাবে তাদের এক হাজার ইয়াজুজ মাজুজের মধ্য থেকে এবং একজন তোমদের মধ্য থেকে হবে। এই বিষয়বস্তু সহীহ মুসলিম গ্রন্থে সায়ীদ খুদরী থেকে বর্ণিত আছে।
মুসনাদে আহমদ ও মুসনাদে আবু ইয়ালায় বর্ণিত হযরত আনাস ইবনে মালিকের বাচনিক এক রেওয়ায়েতে রাসূল (স) বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের সৎকর্ম পিতামাতার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে। কোন সন্তান অপকর্ম করলে তার নিজের আমলনামায়ও লেখা হয় না এবং পিতামাতার আমলনামায়ও রক্ষিত হয় না। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার নিজের আমলনামা চালু হয়ে যায়। তখন তার হেফাজত ও তাকে শক্তি যোগানোর জন্য সঙ্গীয় দু’জন ফেরেশতাকে আদেশ করা হয়। যখন সে মুসলমান অবস্থায় ৪০ বছর বয়সে পৌঁছে যায় তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে উন্মাদ হওয়া, কুষ্ঠ ও ধবলকুষ্ঠ এই রোগত্রয় থেকে নিরাপদ করে দেন। যখন ৫০ বছর বয়সে পৌঁছে আল্লাহ তার হিসাব হাল্কা করে দেন। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছলে সে আল্লাহর দিকে রুজুর তাওফিক প্রাপ্ত হয়। সত্তর বছর বয়সে পৌঁছলে আসমানের অধিবাসী সব ফেরেশতা তাকে মহব্বত করতে থাকে। আশি বছরে উপনীত হলে আল্লাহ তায়ালা তার সৎকর্মসমূহ লিপিবদ্ধ করেন এবং অসৎ কর্মসমূহ মার্জনা করে দেন। নব্বই বছর বয়সে আল্লাহ তায়ালা তার অগ্র পশ্চাতের সব গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে তার পরিবারের লোকদের ব্যাপারে শাফাআত করার অধিকার দান করেন ও শাফায়াত কবুল করেন। যখন তার উপাধি হয়ে যায় আমিনুল্লাহ ও আসিরুল্লাহ ফিল আরদ্ব: পৃথিবীতে আল্লাহর বন্দি, কেননা এ বয়সে সাধারণত মানুষের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। কোনকিছুতে উৎসুক থাকে না। সে বন্দির ন্যায়ে জীবনযাপন করে। অতপর মানুষ যখন আরযালে ওমর তথা নিষ্কর্মা বয়সে পৌঁছে যায়, তখন সুস্থ ও শক্তিবান অবস্থায় যেসব সৎকর্ম করত তা অব্যাহতভাবে তার আমলনামায় লিখা হয় এবং কোন গুনাহ হয়ে গেলে তা লিপিবদ্ধ করা হয় না। – (বিস্তারিত তাফসির মাআরিফুল কোরান, অখণ্ড পৃ ৮৯৫)।
মাহে রমজানে পরওয়াদিগারের কাছে আমাদের ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদের আধ্যাত্ম চিন্তা চেতনা, ধ্যান ধারণা ও জীবনবোধে উজ্জীবিত করেন এবং তার মাগফিরাতের চাদরে আবৃত করেন।