কোনো রাষ্ট্র বা সমাজই অপরাধমুক্ত নয়, তবে আধুনিকতা ও অগ্রগতির পথে চলমান সমাজে বা রাষ্ট্রে অপরাধ কমানো বা নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা থাকে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের উন্নতির পরিক্রমায় ক্রমান্বয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে এবং তাতে সফলও হয়েছে, যদিও ওই সব রাষ্ট্রের কোনোটিই সম্পূর্ণ অপরাধশূন্য বা অপরাধীমুক্ত হয়নি। ওই সব দেশের পরিচালকমণ্ডলীতে তথা রাজনীতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কম। এটাই তাদের আধুনিকতা ও অগ্রগতির স্মারক। মোটকথা সভ্য-সংস্কৃত সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে অপরাধপ্রবণতার রাশ টেনে ধরতেই হবে। এ ব্যাপারে সরকারের যেমন গুরুদায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিকদের সচেতনতা, সক্রিয়তার প্রয়োজন রয়েছে।
সমাজ ও তার সদস্যদের, রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের যথাযথ মেলবন্ধন না হলে কোনো ব্যবস্থাকে ‘নিষ্কলুষ’ করা সম্ভব নয়। আমাদের রাষ্ট্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রবল ঘাটতি রয়েছে। ফলে ছোট অপরাধ তো হচ্ছেই, হত্যা-অপহরণ-পাচারের মতো বড় অপরাধও আকছার ঘটছে। সরকারের হাতে লাগাম নেই, সমাজও নৈতিকভাবে অবক্ষয়গ্রস্ত। এই অবকাশে সব ধরনের অপরাধ মসৃণ গতিতে বর্ধমান। দেশে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন মানুষ খুন হচ্ছে। কখনো রাজনীতি, কখনো দখলবাজি, কখনো পারিবারিক শত্রুতা, আবার কখনো মাদক কারবার। চোরাকারবার বা জুয়ার আসরের কারণেও খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে।
কারণ যা-ই হোক, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জন্য বিবেচ্য বিষয় হলো, একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে, একটি জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে; এর বিচার হতে হবে। অপরাধের মানসিকতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্র বা সমাজ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা এ কথা বিবেচনায় নেবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।