সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নীতিমালা জরুরী

33

সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিত্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রেলপথে বা আকাশপথেও দুর্ঘটনা ঘটে, তবে সড়ক দুর্ঘটনার মতো আকছার ঘটে না। সড়কে-মহাসড়কে প্রতিদিনই একাধিক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঘর থেকে বেরিয়ে অক্ষত অবস্থায় ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই। এককথায় সড়ক পরিবহনব্যবস্থা নৈরাজ্যকবলিত। প্রায়ই দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর সময়মতো যথাচিকিৎসার ব্যবস্থা হয় না; কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা মেলে না। এ কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। উদ্ধারকারী ব্যক্তিরাও হয়রানির শিকার হন।
এসব সমস্যা মোকাবেলায় সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তাকারী সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে। এই নীতিমালা জারি হলে এজাতীয় সমস্যা কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর আগে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা-২০১৭-র খসড়া করা হয়েছিল। সেটিই পরিমার্জন করে নতুন নামে প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিমার্জিত খসড়ায় ‘সহায়তাকারী সুরক্ষা প্রদান’ শীর্ষক ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তির অবহেলা বা শিথিলতা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। তখন নিবন্ধন বা লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সেলও গঠন করবে সরকার। খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তি নিজেই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে চিকিৎসা দেওয়ার আগে তাকে পুলিশে দেওয়া যাবে না। পুলিশ বরং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা না থাকলে তারা রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করে দ্রুত উপযুক্ত সুবিধাসংবলিত হাসপাতালে স্থানান্তর করবে। কিন্তু নিজেদের সক্ষমতা থাকলে রোগীকে স্থানান্তর করা যাবে না। জরুরি শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে উপযুক্ত অভিভাবক বা আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে ও সম্মতি ছাড়াই করা যাবে। এ ক্ষেত্রে জীবনহানি ঘটলে চিকিৎসককে দায়ী করা যাবে না। উদ্ধারকারী বা সহায়তাকারী ব্যক্তিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটক বা হয়রানি করতে পারবে না। তাকে পরিচয় দিতে বাধ্য করা যাবে না; তবে স্বেচ্ছায় তথ্য দিলে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
খসড়াটি প্রণয়ন করা হয় একটি রিটের ওপর হাইকোর্টের ২০১৬ সালের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। তাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসা দিতে সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয় সরকারকে। খসড়াটি এখন পর্যালোচনা করছেন আদালত; আগামী মাসে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। এরপর সরকার তা জারি করবে। এমন একটি নীতিমালা খুবই জরুরি। আশা করা যায় এর সুফল মিলবে।