দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। অন্য হিসাবে দেখা যায়, যাদের নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই, এমন মানুষের সংখ্যা চার কোটি ৫৬ লাখ। তারাও বেকার। তাদের মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই এক কোটির বেশি, যাঁরা হন্যে হয়ে নানা জায়গায় চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। বেকারত্বের অসহনীয় অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণ ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। আর তা করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতারকের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়, অনেককে জীবনও দিতে হয়। আবার উল্টো চিত্রও আছে। দেশে এমন অনেক চাকরিদাতা আছেন, যাঁরা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী লোক পান না। তখন বিদেশিদের নিয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশে এখনো লাখ লাখ বিদেশি কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলসের উপাচার্য প্রকৌশলী অধ্যাপক মাসউদ আহমেদ এর মতে, তাঁদের ছাত্রদের পাস করার আগেই চাকরি প্রস্তুত থাকে। এমনকি দু-এক বিষয়ে ফেল করা ছাত্রদেরও চাকরি হয়ে যায়। বরং চাহিদার তুলনায় তাঁরা খুব কমসংখ্যক ছাত্রকেই তৈরি করতে পারছেন। একই ধরনের কথা বললেন কয়েকটি পলিটেকনিক ও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান। উল্টো চিত্র সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। শুধু শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছেন। যেসব সংস্থা বিদেশে কর্মী পাঠায়, সেসব রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, তাঁরা অনেক দেশের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত লোক পাঠাতে অনেক সময়ই ব্যর্থ হন। বিভিন্ন দেশে সুনির্দিষ্ট ৩০টি কাজের জন্য লোকের চাহিদা আসে, কিন্তু দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এমন হলে ভবিষ্যতে এসব দেশ বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধও করে দিতে পারে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংস্থা বায়রার সভাপতি জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন জেলায় ৬০টির মতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার উদ্যম আছে এমন অনেক তরুণ চাকরির অপেক্ষা না করে এমন অনেক কিছু করছেন, যাতে শুধু তাঁদের নয়, আরো অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্স কাজের যে মার্কেট রয়েছে সেখানেও বাংলাদেশের প্রায় সাত লাখ তরুণ-তরুণী কাজ করছেন। তাঁরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভালো রোজগারও করছেন।
আমাদের নীতিনির্ধারকদের কর্মসংস্থানের দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্থান। কত সংখ্যক শিক্ষার্থী সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, আর কত সংখ্যক শিক্ষার্থী পেশা অনুযায়ী বিশেষায়িত শিক্ষা নেবে, তা ঠিক করতে হবে। সে অনুযায়ী বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে শিক্ষিত বেকারের ক্রমবৃদ্ধি একসময় বিপদও ডেকে আনতে পারে।