মৌলভীবাজারে অবৈধভাবে চলছে অবাধে ডলার এবং পাউন্ড কেনা বেচা!

37

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রতিদিনই লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুদ্রা নিয়ে দেশে আসেন প্রবাসীরা। এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে গেলে অবৈধ এসব দোকানিরা তাদেরকে রিসিভ করে মানি এক্সচেঞ্জ করছেন।
মৌলভীবাজার পৌর শহরের বেরিরপাড় পয়েন্টে রয়েল ম্যানশনের মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার অবস্থান। সেই সুবাধে ওই মার্কেটের নিচ তলা ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় একটি মাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটি হলো সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ। তবে জেলায় রয়েছে অনন্ত শতাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে শহরের রয়েল ম্যানশনের তরফদার এন্টারপ্রাইজ, শাহ মোস্তফা টেলিকম, রুমন এন্টার প্রাইজ, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স, মদিনা ট্রেডার্স, এস এ ট্রাভেলস এন্ড কন্সাল্টেড, কোরেমি ট্রেডার্স, জিসান এন্টার প্রাইজ, এফ ইলেকট্রনিক্স, আহমদ ম্যানশনের নিউ জলি ক্লথ স্টোর এর নাম। এগুলো ছাড়াও অবৈধ আরো শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে বৈদেশিক মূদ্রা বিনিময় করে আসছে। অনেক দোকানি সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দোকানের সাটার বন্ধ করে সটকে পড়েন।
প্রতিদিনও প্রবাসীরা অবৈধ এসব দোকানিরা তাদের রিসিভ করে মানি এক্সচেঞ্জ করছেন। মোবাইলের দোকান, টাইলসের দোকান, কাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসার আড়াঁলে চলছে অবৈধ হুন্ডি এবং মূদ্রা বিনিময় ব্যবসা। ক্রেতাকে হাতছাড়া না করতে একই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাস্তার দুই পাশে গড়ে তুলেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান।
সরেজিমনে বুধবার দুপুরে পৌর শহরের বেরিরপাড় এলাকায় ছদ্ম বেশে প্রবাসী সেজে রয়েল ম্যানশনের ভেতরে ডানদিকের তৃতীয় দোকানে গেলে দেখে মনে হবে মোবাইলের চার্জার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকান। মূলত সেটি চার্জার বা ইলেকট্রনিক্স পণ্যেও দোকান না। দোকানের ক্যাশে বসা এক ব্যক্তিকে গিয়ে জানতে চাওয়া হলো মানি এক্সচেঞ্জ করা যাবে কি না ? উত্তরে তিনি বললেন যাবে। তিনি বলেন? ডলার নাকি পাউন্ড। ১০ পাউন্ডের নোট বলায় তিনি বলেন ১২০ টাকা দেয়া যাবে। তারপর অনেক বাকবিতন্ডার পর পাউন্ড প্রতি ১৩০ টাকা দিতে রাজি হন। ১০ পাউন্ডের নোট এক্সটেঞ্জ করা হলো ১৩০০ টাকায়। এভাবেই প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মূদ্রা বিনিময় করছে এই সংঘবদ্ধ চক্র।
সরকার অনুমোদিত মৌলভীবাজার সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালক সৈয়দ ফয়ছল আহমদ বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করে যাচ্ছি। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের নিচে ও আশাপাশ এলাকায় অবৈধভাবে ১৫-২০ বছর ধরে লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ডলার ও পাউন্ডের ব্যবসা করছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল হক রাসেল বলেন, সরকার অনুমোদিত বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ হলো একটি প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ, তারাই বৈধ ভাবে ব্যবসা করছে। আর অবৈধ ভাবে কেউ ব্যবসা করছে কিনা আমার জানা নেই। অবৈধভাবে কিংবা সরকারের চ্যানেলের বাহিরে কেউ মানি লেনদেন করলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তো আসলে এসব অবৈধ চ্যানেল বন্ধ করা একান্তই প্রয়োজন।