মশাবাহিত রোগ

32

মশার উৎপাতে এরই মধ্যে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ। বর্ষা জেঁকে বসলে অবস্থা কী হবে তা ভাবতেও কষ্ট হয়। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বড় বড় যন্ত্রে বিকট আওয়াজ তুলে ওষুধ ছিটালেও মশার উৎপাত কমছে না। ফলে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত বছর চিকুনগুনিয়া ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছিল। অনেকেরই ধকল কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তাই চিকুনগুনিয়া এখনো আতঙ্কের কারণ হয়ে আছে। ডেঙ্গুতেও ভুগেছে অনেকে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আছে ডেঙ্গুর ভীতিও। এ বছর এরই মধ্যে কয়েকজন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বর্ষায় ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়াতে পারে। তাই এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানি ও মশাবাহিত রোগ বেড়ে যাবে বলে অনেক আগেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এখন আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি কিন্তু এসব রোগ প্রতিরোধে যা যা করণীয় তা ঠিকমতো করছি না। মশার প্রজননের জন্য পানি প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রজাতির মশা বিভিন্ন ধরনের পানিতে ডিম-বাচ্চা দেয়। এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম-বাচ্চা দেয়। পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, যত্রতত্র ফেলে রাখা কৌটা, এমনকি ঘরের ভেতরে কম ব্যবহৃত কোনো পাত্রে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। তাই এই মশার বংশ বৃদ্ধিতে নাগরিক অসচেতনতাকেও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়। ঢাকার যেসব এলাকায় হাজামজা ডোবা, খাল, বিল বা জলাশয় বেশি সেসব এলাকায় কিউলেক্স মশার উৎপাত বেশি। এগুলোর সংস্কার বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ওয়াসাসহ যেসব সংস্থার হাতে তারা সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। পার্বত্য এলাকাসহ পূর্বাঞ্চলের ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী অ্যানোফিলিস মশার উপস্থিতি বেশি। সারা দুনিয়ায় মশাবাহিত ৯টি রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলেও বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ছয়টি রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও ফাইলেরিয়া (গোদ রোগ) আগে থেকেই আছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ অ্যানসেফালাইটিস ও জিকা। দেশে জিকা সংক্রমণের অল্প কয়েকটি ঘটনা জানা গেলেও অনেক দেশে এটি রীতিমতো আতঙ্কের কারণ।
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আর মশা নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হচ্ছে মশা জন্মানোর উৎসস্থল ধ্বংস করা, সেটা ঘরে হোক কিংবা ঘরের বাইরেই হোক। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ড জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মশা নিধন ও লার্ভা নিধনে নিয়মিত ওষুধ ছিটাতে হবে। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। ময়লা ও পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি যেখানে সেখানে না ফেলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে ফেলতে হবে। ফুলের টব, ফুলদানি বা অন্য কোনো পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। মশাবাহিত ভয়ংকর সব রোগের হাত থেকে বাঁচতে সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।