দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফল পাওয়া গেছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনীতির চাকায় গতিসঞ্চার হলেও দেশের ব্যাংকিং খাতে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। যদিও গত কয়েক বছরে দেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব ব্যাংক কি আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে? ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভূমিকাই মুখ্য হওয়া উচিত। কিন্তু দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো সেভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সুশাসন বলতে যা বোঝায়, বেশির ভাগ ব্যাংকেই তা নেই। কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও কার্যকর আদালত ব্যবস্থা নেই। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত রক্ষায় ১৯৯৮ সালে বিশ্বব্যাংক যে তিনটি সুপারিশ করেছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের সুপারিশও বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংককে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে কার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা গেলে হয়তো ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের এই সুপারিশ উপেক্ষিতই থেকে গেছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকিং খাত রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না। ঋণখেলাপি সংস্কৃতি এখনো ব্যাংকিং খাতে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। আদালতব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ঋণখেলাপিরা নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও জবাবদিহি না থাকায় ব্যাংকের পরিচালকরাই লুটপাটে অংশ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, একাধারে কেউ দীর্ঘদিন ব্যাংকের পরিচালক থাকলে সেখানে তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে তাঁর মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আশা করা যায় না। অনেকে মনে করেন, ব্যাংক কম্পানি আইনে যে সংশোধন আনা হয়েছে, তাতে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে। একই পরিবারের চারজন সদস্য একই ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে বলেও অনেকের আশঙ্কা।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করতে হবে। এ জন্য দেশের ব্যাংকিং খাতকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর সে জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভূমিকাই হবে মুখ্য। প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরবে।