সিলেটে জঙ্গিদের অপতৎপরতা

40

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার পর সিলেট আবার আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্মের নামে কিছু জঙ্গি মনোভাবের লোকের অধর্মপরায়ণতা সুফি-সাধকদের আশীর্বাদধন্য পুণ্যভূমিখ্যাত সিলেটকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। একসময় ফতোয়াবাজির কারণে সিলেট প্রায়ই জাতীয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হতো। সালিস-ফতোয়াবাজির ওই ধারা স্তিমিত হলেও গত দুই দশকে জঙ্গি মানসিকতার বিস্তার ঘটেছে।
সিলেটে আগেও অনেকবার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মৌলবাদী গোষ্ঠীর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাদের হুমকির কারণে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও কবি শামসুর রাহমান সিলেটে যেতে পারেননি। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও উগ্রতার নতুন সংস্করণ জঙ্গিবাদ। গত দুই দশকে অনেক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০০১ সালে নির্বাচনী জনসভার দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সিলেটে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভায় বোমা হামলা এবং ২০০৫ সালে সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
সিলেটের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মহলের অভিমত, অনুকূল আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও ভৌগোলিক পরিবেশ থাকায় বাড়ছে জঙ্গি তৎপরতা। সিলেটের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এ বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা। অনেক মাজার থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সিলেটে আসে। তাদের ভিড়ে মিশে সহজেই বিচরণ করতে পারে তারা। সিলেটে অনেক প্রবাসী আছে। তাদের বাড়িঘর ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তুলছে। তাদের কেউ কেউ জঙ্গিদের অর্থায়ন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারো কারো সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সিলেট সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অস্ত্র-বিস্ফোরক আনা সহজ। বিভিন্ন এলাকায় গভীর বন ও পাহাড়-টিলা রয়েছে, যেখানে গাঢাকা দিয়ে থাকা, গোপন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো সহজ। একসময় সিলেটের প্রচুর মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। দেশে আসার পর তাঁদের নজরদারিতে রাখা হয়নি।
জঙ্গিবাদ মৌলবাদী মানসিকতারই একটি রূপ। সশস্ত্র কিছু গ্রুপকে নির্মূল করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মৌলবাদী চিন্তা ও জঙ্গিবাদের সহায়ক সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এটিকে গুরুত্ব না নিলে জঙ্গিবাদের অনুকূল পরিবেশ থেকেই যাবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য যা ঊষর ভূমি, জঙ্গিবাদের জন্য তা-ই উর্বর ভূমি। আদর্শিক রাজনীতির চর্চা ও সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া এই বালাই থেকে মুক্তি নেই। জঙ্গিবাদকে যেমন আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে, তেমনি মতাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক উপায়েও মোকাবেলা করতে হবে।