সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ফয়জুলের গ্রামের বাড়ির প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ। ঘটনার পরপরই ফয়জুলদের স্বজনরা বাড়িতে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। রবিবার (৪ মার্চ) সরেজমিনে তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ারকাপন গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
কলিয়ারকাপন গ্রামে গিয়ে ফয়জুলের বাড়ির আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার নাম ফয়জুর রহমান ফয়জুল হলেও স্থানীয়রা তাকে ফয়জুল হাসান নামে চেনে। ফয়জুলকে তারা ধার্মিক হিসেবেই চিনতো। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তবে তার নামাজের ধরন ছিল শিয়া বা আহলে সুন্নত মতাদর্শদের মতো।
তালাবদ্ধ ফয়জুলের স্বজনদের বাড়িস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান এলাকায় কুরুষ আলী নামে বেশি পরিচিত। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ফয়জুল তৃতীয়। প্রায় ১৫ বছর আগে তারা সিলেটে চলে যায়। তবে বিভিন্ন সময় ঈদে তারা বাড়িতে আসে। তারা জানান, সিলেটে আগে কাপড় ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো ফয়জুল। পরে সে একটা মোবাইল ফোনের দোকান করে।
জগদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেবু মিয়া জানান, ১০/১৫ বছর আগে ফয়জুল সিলেটে চলে যায়। গ্রামের বাড়িতে সে মাঝে মধ্যে আসতো। এ সময় সে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতো।
উদ্বিগ্ন ফয়জুলের গ্রামের লোকজনজগদল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্বাস মিয়া বলেন, ‘সে শিয়া কায়দায় গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তো। এ নিয়ে গ্রামের প্রবীণরা প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়নি। এলাকায় এসে সে মানুষের সঙ্গে খুব একটা মিশতো না।’
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ছুবা মিয়া জানান, ফয়জুল স্থানীয় ধল মাদ্রাসায় প্রথমে শিক্ষাজীবন শুরু করে। পরে সে সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফয়জুল ও তার এক ভাই সিলেটে থাকে। অন্য ভাই প্রবাসী। তার বাবা এলাকায় মাওলানা হিসেবে পরিচিত। ফয়জুলের ফুফু রেহেনা বেগম বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় সে সিলেটে অবস্থান করতো। গ্রামে খুব কম আসতো।’
পরধল দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ধল দাখিল মাদ্রাসায় ফয়জুল হাসানের জন্ম তারিখ ৫ জুলাই ১৯৯৯ লেখা আছে। সে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৪ সালে সে এই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। পরে কোথায় লেখাপড়া করেছে তা জানেন না।
এদিকে, রবিবার ভোরে ফয়জুলের চাচা আবুল খায়েরকে কলিয়াকাপন গ্রাম থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র্যাব। বর্তমানে এলাকায় পুলিশ অবস্থান করছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) এবিএম দেলোয়ার বলেন, এ ঘটনার পর তার স্বজনরা বসতবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তকাজ ও তথ্য সংগ্রহ করেছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৩ মার্চ) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলাকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ফয়জুর রহমান ফয়জুল (২৫) নামের এক তরুণ। এরপর জাফর ইকবালকে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।