স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে প্রখ্যাত লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতের স্বীকার হয়েছেন। ছুরিকাঘাতের পর প্রথমে তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান শেষে আইসিটি ভবনে ২৪-২৫ বছর বয়সী এক যুবক তার মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
এ ঘটনায় হামলাকারীকে শিক্ষার্থীরা আটক করে গণপিটনী দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুর রহমান জাফর ইকবালের উপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কারা, কী কারণে এই হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আগে দুর্বৃত্তের হামলায় ছুরিকাহত ড. জাফর ইকবালকে ঢাকায় এনে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান রাজধানীর ঢাকার শাহবাগে জড়ো হওয়া গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
শাবিপ্রবি’র ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান জানান, শনিবার পৌনে ৭টায় ছুরিকাঘাতে আহত ড. জাফর ইকবালের মাথায় ও ঘাড়ে ৭-৮টি স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি জানান, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ফেস্টিভ্যাল চলছিল ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে উৎসব থেকে আসার সময় ২৪-২৫ বছরের এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তার মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পুলিশের একই মাইক্রোবাসে করে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, হামলাকারী ওই যুবককে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। আটক হওয়া যুবককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবনে রাখা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না বহিরাগত সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি এবং কী কারণে এই হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব জনানা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী একাই ছিল। তার সাথে আর কেউ ছিল না। তাকে আটক করা হয়েছে। তবে হামলাকারীর পরিচয় জানাতে পারেননি। পুলিশ এ কর্মকর্তা জানান, কি কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে-তারা তা খতিয়ে দেখছেন। হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এ ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটিত হবে।
ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। তিনি জানান, জাফর ইকবালের মাথার পিছনের দিকে ২টি, পিঠে ১টি ও বাম হাতে ১টি জখম রয়েছে।
শাবি ক্যাম্পাস উত্তপ্ত : ড. জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত রয়েছে ক্যাম্পাস। শনিবার বিকেলে হামলার পর শাবির শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শাবির একাডেমিক ভবন-২ অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পরে পুলিশ আটককৃতকে চিকিৎসার জন্য ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিলেট আসছে সিটিটিসি : ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিলেটে আসছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি)। সিটিটিসি সূত্র জানিয়েছে, অতীতে বিভিন্ন সময় ড. জাফর ইকবালকে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর দেওয়া হুমকির বিষয়টি মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত করা হবে। সিটিটিসির উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘যেহেতু জাফর ইকবালের ওপর বিভিন্ন জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর হুমকি ছিল। এই বিষয় মাথায় রেখে আমরা ছায়া তদন্ত করছি। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে আটক হওয়া হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের একটি টিম সিলেট যাবে।
শাহবাগে মশাল মিছিল : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর ছুরিকাঘাতের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
শনিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে কাটাবনের দিকে রওয়ানা দেয়। এতে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেয়।
এর আগে এক সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণ করে এদেশে প্রগতিশীল মানুষরা নিরাপদ নয়। নিরাপত্তার মধ্যে এ ধরনের হামলায় সরকার দায় এড়াতে পারে না। অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রমাণ করে আমরা কেউ নিরাপদ না।