দোয়ারাবাজারে ৪৭টি ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে ধূম্রজাল ॥ অপ্রয়োজনীয় বাঁধ, কাজে ধীরগতি, অতিরিক্ত বরাদ্দের হিড়িক

36

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
দোয়ারাবাজারে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে উপকারভোগী কৃষক ও খোদ পিআইসিদের মধ্যে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে সরকারের দেয়া সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ প্রকল্পের ৩০ ভাগ কাজও সম্পন্ন হয়নি। চলমান কয়েকটি প্রকল্প ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধের ফলে কৃষকদের কোনো উপকারে আসবেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম উপজেলার সুরমা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সরজমিন পরিদর্শন করেছেন।
চলতি মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ উপজেলায় মোট ৪৮টি ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের মধ্যে উপকারভোগী কৃষকদের তোপের মুখে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ২৮/১ পিআইসি এর দেখার হাওরের ১২ কি.মি হতে সাড়ে ১৩ কি.মি. পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার অপ্রয়োজনীয় বাঁধটি বাতিল করা হয়েছে। একই ভাবে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পিআইসি নং ১/০৭ হাতির ভাঙা বিলের দক্ষিণ পারের ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকার প্রকল্পটি নিয়ে উপকারভোগী কৃষকরা বাঁধটি অপ্রয়োজনীয় বলে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ এখনো ৩০ ভাগও সম্পন্ন হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য হচ্ছে, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে কাজ গুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে পিআইসিদের কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের।
অন্যদিকে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পিআইসি সভাপতি, সেক্রেটারী ও সদস্যদের মধ্যে প্রকাশ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও দেয়া হয়েছে। পিআইসিদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্বের কারণে চলমান কাজ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অপ্রয়োজনী বাঁধের কাজ হওয়ার পর লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশী বলে অভিযোগ করেছেন উপকার ভোগী কৃষকরা। নদী ভাঙনরোধে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীর কেটে ফসল রক্ষা বাঁধের নামে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক। পাউবো সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ওই ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীর সংলগ্ন ধনপুর গ্রাম হতে জালালপুর-কাটাখালী বাজার পর্যন্ত ৫টি প্রকল্পের বরাদ্দ হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। তন্মধ্যে কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি প্রকল্প বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদী ভাঙন কবলিত এলাকার তিনটি প্রকল্পেরন একই অবস্থা। এক্্রভেটর দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকেই মাটি দেয়া হচ্ছে। এমনিতেই বাসিন্দারা নদী ভাঙনের কবলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। ফসল রক্ষা বাঁধের নামে নদীর তীর হতে মাটি কাটায় ভাঙন এখন আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। তবে সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা বলেছেন, নদীর তীর ছাড়া মাটি পাওয়া যায়না তাই বাধ্য হয়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নদীর থীর হতে মাটি কাটতে হচ্ছে।
অপর দিকে সুনামগঞ্জ জেলার চার উপজেলার শষ্য ভান্ডার দেখার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ এর তিনটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ধীরগতিতে কাজ চলায় কৃষকরা এখন শংকিত আছেন। ওই এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ গুলো দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে। এছাড়া একই প্রকল্পে পিআইসিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে সরকারের নির্ধারিত সময়ের পর।
জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেছেন, ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ গুলো দ্রুত শেষ করার জন্য পিআইসিদের আরো ৭দিনের সময় দেয়া হয়েছে। কাজে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।