কাজিরবাজার ডেস্ক :
উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মেয়াদ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ ঘোষণায় ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন। আর কোন অবৈধ কর্মী দেশটিতে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন না। অবৈধদের দেশে ফিরতে হবে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া ঘোষণা গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর ছিল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আবেদনকৃত সবাইকে বৈধ করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
কুয়েতের সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে বিএমইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি শ্রম বাজারেই এ রকম একটি বিষয় থাকে। প্রতিবছরই অল্প কয়েকদিন সময় বেঁধে দেয়া হয় অবৈধদের বৈধ হওয়ার জন্য। কুয়েতও তাই
করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক। কুয়েতে বাংলাদেশী কর্মীরা ভাল বেতনে কাজ করেন। অবৈধ বৈধ হলে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কুয়েতে কর্মীরা বৈধ হওয়ার আবেদন করতে পেরেছেন। তারা অচিরেই বৈধতার কাগজপত্র পেয়ে যাবেন।
কুয়েতে কর্মরত কয়েক কর্মী টেলিফোনে জানান, দেশটিতে বাংলাদেশী প্রায় ৩ লাখ লোক বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। এখান থেকে প্রতিবছরই কিছু লোক অবৈধ হয়ে পড়েন। তারা আবার কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে বৈধ হওয়ার সুযোগ পান। ২০১৭ সালে দেশটির সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা না করায় বহু লোককে দেশে ফিরতে হয়েছে। তবে এর আগের বছর দেশটির সরকার কর্মীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে ৩০ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এক বছর বাদ দিয়ে এবার আবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয় অবৈধ বসবাসকারীদের জন্য। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশীরাও এই সুযোগ নিয়েছেন। দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা ২৫ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এবার সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে নির্দিষ্ট জরিমানা দিয়ে বৈধ হতে হবে। জরিমানার বিষয়টি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করার কারণে যারা দেশে ফিরতে পারছিলেন না তাদের বৈধ হতে কোন টাকা লাগবে না। কারণ তাদের বৈধ করে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে। যারা দেশেটিতে কাজের জন্য থাকতে চান তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে বৈধ হতে হবে। যাদের নামে আদালতে মামলা চলছে তারা এই সুযোগ পাবেন না। আবার যাদের ওপর কুয়েতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তারাও এ সুযোগ পাবেন না।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার ঘোষিত জরিমানার পরিমাণ ৬শ’ কেডি (কুয়েতি দিনার)। বাংলাদেশী টাকায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৩১৭ টাকা। ২০১৬ সালে সাধারণ ক্ষমায়ও জরিমানার পরিমাণ একই ছিল। যারা বৈধ হয়ে দেশে ফিরবেন তাদের জন্য কুয়েতে নতুন ভিসা নিয়ে আসতে পারবেন। যারা অবৈধ থেকেই দেশে ফিরবেন তারা আর কুয়েতে যেতে পারবেন না।
কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত সরকারের সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ফেসবুক পেজসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। দূতাবাস প্রচারপত্র ও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে কর্মীদের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়। দূতাবাসের পক্ষ থেকে কর্মীদের কাছে এসএমএস পাঠানো শুরু হয়। ফেসবুক খোলার বিষয়ে দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছিল। দূতাবাসের নানা উদ্যোগের কারণেই নির্দিষ্ট সময়ে কর্মীরা বৈধ হওয়ার কাগজপত্র জমা দিতে পেরেছেন।
উল্লেখ কুয়েত সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। মাঝখানে এক বছর কেটে যাওয়ার পর চলতি বছর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করল। ২০১৬ সালে সাধারণ ক্ষমায় ৩০ হাজারের বেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার দেশটিতে ২৫ হাজারের বেশি অবৈধ কর্মী ছিল। যারাই এ সুযোগ হাত ছাড়া করেছে তাদেরই দেশে ফিরে আসতে হবে।