জেড.এম. শামসুল
মহান ভাষা আন্দোলনের এ উত্তাল দিনে দেশব্যাপী ছাত্র জনতার একই দাবী রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও তমদ্দুন মজলিশ ঢাকা সহ ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া শুরু করেন। সভা সমাবেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষা চাই এ শ্লোগানে ঢাকার রাজপথ মুখরিত হয়ে উঠে। ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন গণসংযোগের তৎপরতা জোরদার করতে থাকেন।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর হরফ সমস্যা সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের একটি প্রেসনোট প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় ভাষা প্রচলিত বাংলা হরফে লেখা হবে অথবা আরবী হরফে লেখা তা প্রদেশের জনগণের স্বাধীন মতামতের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে।
এ প্রেসনোটে বাংলা ভাষার উপর আরবী হরফ চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। এ বছরের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা রূপে অবহিত করে সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও ৫ম শ্রেণী থেকে ঊর্ধ্বতন শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে প্রস্তাব করেন। এ দিন কুমিল্লা জেলা তমদ্দুন মজলিসের এক সভায় বাংলা ভাষায় উর্দু হরফ প্রবর্তনের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। এ বছরের ২৪ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের আরবী সমিতি গঠন করা হয়। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এক সভায় আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়। ১৯৫০ সালের মে সাসে তারা আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ১৪টি যুুক্তি প্রদর্শন করে সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ বছরের ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে তরীক উল্লার মতামত প্রকাশ করা পায়। তিনি মন্তব্য করেন ইসলামের নামে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা খন্ডন করার জন্য ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর বিকল্প হিসাবে অধিকতর সঙ্গত কারণে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডঃ মাযহারুল ইসলামের অভিমত গ্রহণযোগ্য ছিল। ডঃ শহীদুল্লাহ আরবীর পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন তাকে ভুল বোঝানোর অবকাশ আছে। তার সাথে কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, সবার ঊর্ধ্বে তিনি বাংলাকেই স্থান দিয়েছিলেন আর তিনি এ যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন উর্দুকে প্রতিরোধ করার জন্য।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই বাংলাভাষা ও বাংলা বিরোধী চক্রের নানান অপকৌশলের হাত থেকে বাঙালি জাতি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বিগত দিনগুলো অতিবাহিত করতে লাগল। বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষায় পরিণত হতে লাগল। আন্দোলন সংগ্রাম আর শহরতলীতে বিক্ষোভ মিছিল।