বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হউক

5

 

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার এশিয়াটিক সোসাইটি ও নিউইয়র্কের এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট ‘ইন্ডিয়া, এশিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে এক আলোচনাসভার আয়োজন করে। সেখানে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক ও গঠনমূলকই থাকবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইয়ের তথ্য উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর বলেছেন, বিষয়টি এমন নয় যে ভারত তার সব প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এভাবে চলেও না। তিনি বলেছেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, দিনের শেষে পারস্পরিক নির্ভরতা, একে অন্যের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে থাকা, পারস্পরিক উপকারের বাস্তবিকতা প্রতিবেশীরা সবাই উপলব্ধি করতে পারবে। বাংলাদেশের বিষয়টি একটু আলাদা উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, এক দশক ধরে ভারত বাংলাদেশে বহু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সেসব প্রকল্প দুই দেশের পক্ষেই মঙ্গলজনক ও ফলদায়ী। এতে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। অবকাঠামোরও উন্নতি হয়েছে। জয়শঙ্কর আরো বলেন, প্রতিটি দেশের নিজের একটি গতি থাকে।
পছন্দ থাকে, প্রয়োজন থাকে। নিজস্ব ‘ডাইনামিকস’ থাকে। ক‚টনীতিতে তা বুঝতে ও শিখতে হয় এবং সেই মতো সাড়া দিতে হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একমত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী দেশ। এই দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন ইতিহাস। রয়েছে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক মেলবন্ধন। সবার ওপরে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই দেশের মানুষের মধ্যে রক্তের যে বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, তার অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একজন প্রাজ্ঞ ক‚টনীতিক। ক‚টনীতি বলে, পেছন দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চলতে হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমানের শিক্ষা লাভ করলে তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের চলার পথ মসৃণ হয়। আন্তর্জাতিক ভ‚-রাজনীতির সমীকরণে দুই দেশের অবস্থান নিয়েও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করলে যে কেউ বুঝতে পারবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের জায়গাটা দুই দেশেরই নিরাপত্তা, উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কতটা জরুরি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে অতীতে যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, তা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মানুষে-মানুষে সম্পর্কও এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে। বাংলাদেশ সব সময় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো শক্তিশালী হবে এবং উভয় দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যাবে।