কাজিরবাজার ডেস্ক :
এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ৫ দফা সুপারিশ করেছে মেডিক্যাল বোর্ড। লিখিতভাবে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় কি হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্যই ৫ দফা সুপারিশ করেছে। এতে খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যালোচনার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তবে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হবে সরাসরি এমন কোন সুপারিশ করা হয়নি। তবে চিকিৎসক বোর্ডের সপারিশ হচ্ছে তাঁকে এমন একটি উচ্চতর কেন্দ্রে স্থানান্তর করা উচিত, যেখানে মাল্টিসিস্টেম ডিজিজ ম্যানেজমেন্টের জন্য অগ্রিম সুবিধা পাওয়া যায়।
খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের পাঁচ দফা সুপারিশে যা বলা হয়েছে- ১) ক্রনিক লিভার ডিজিজ (লিভার সিরোসিস) কোন পর্যায়ে রয়েছে তা পরীক্ষা করে খাদ্যনালীর কোন জায়গা থেকে (ডিআই ব্লিডিং) হচ্ছে, সেটি বের করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনও লাগতে পারে।
২) কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার শরীর প্রোটিন ধরে রাখতে পারছে না। প্রগ্রাবের সঙ্গে অনেক প্রোটিন বের হয়ে যায়। এ জন্য তার আধুনিক বা উচ্চতর চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, ক্রনিক লিভার ডিজিজ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
৩) হৃদরোগের জটিলতার কারণে যে কোন সময় তাঁর হৃদরোগের বেদনায় বিশেষ একটি চেম্বার বা অংশে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার হার্টের স্পদন মাঝেমধ্যেই অনিয়মিত (ইরেগুলার হার্টবিট) হয়ে পড়ে এবং এটি যে কোন সময় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হার্টের জটিলতার সূত্র ধরে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা, এমনকি তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রিং পরানোর প্রয়োজন হতে পারে।
৪) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন না। এটা ক্রনিক লিভার ডিজিজ ও ক্রনিক কিডনি ডিজিজের কারণে। এই রোগের চিকিৎসা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেছেন, এটির চিকিৎসা বিশ্বের অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিকতম হাসপাতালেই সম্ভব।
৫) এ ছাড়া খালেদা জিয়ার পারিবারিক রোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা তার রোগের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরী বলে মনে করেন। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দার ক্যান্সারে এবং বোন খুরশিদ জাহান হক ক্রনিক লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
করোনা পরবর্তী জটিলতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ফুসফুস, হার্ট, লিভার ও কিডনি শরীরের এই চারটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে লিভার ও কিডনি প্রায় অর্ধেক কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। তাই তিনি স্বাভাবিক কার্যক্রম যথাযথভাবে করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা প্রয়োজনে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের (প্রতিস্থাপন) সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, হৃদরোগের কারণে খালেদা জিয়ার শরীরের যে কোন একটি চেম্বার বা অংশের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে কবে বাসায় ফিরবেন তা নিশ্চিত হয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া কবে বাসায় ফিরবেন বা তাঁর আরও কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ভর করছে মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশের ওপর।