দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৮৬ হাজার। এ হিসাব বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৬৬ হাজার চিকিৎসক দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত আছেন ২৩ হাজার, বাকি ৪৩ হাজার বেসরকারি খাতে নিয়োজিত। বেসরকারি খাতে নিয়োজিতদের বেশির ভাগ আবার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা। বিএমডিসির এ হিসাবে অস্বস্তির কারণ নেই, বরং স্বস্তি পাওয়ারই কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষ এখনো সরকারি চিকিৎসকের কাছেই যেতে চায়, বেসরকারি চিকিৎসকের ওপর তাদের আস্থা কম। ফলে একাংশের ওপর প্রবল চাপ এবং অন্য অংশে চিকিৎসাপ্রার্থীর অভাব।
বলা হচ্ছে, মানুষের আস্থা পাচ্ছেন না বিপুলসংখ্যক বেসরকারি চিকিৎসক। নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসকরাই নাকি এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এ কথা ঢালাওভাবে বলে দেওয়া যায় না যে ওই সব প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী সব চিকিৎসকই মানহীন, আর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা সবাই উচ্চ মানসম্পন্ন। দেশে চিকিৎসকের চাহিদা আছে। না থাকলে বছর বছর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ত না এবং শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো না। আসলে প্রয়োজনের এ বিষয়টিকে ঠিকমতো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। শিক্ষা বেসরকারি খাতে না যাওয়াই উচিত। গেলেও মান নিশ্চিত করা দরকার। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির একটি মান ও রীতি আছে, বেসরকারি কলেজে কি তা নেই? তাহলে বিএমডিসির নিবন্ধন মিলছে কী করে! বেসরকারি কলেজে পাঠদানে কি মান রক্ষা করা হচ্ছে না? যদি রক্ষা না-ই করা হয়, তাহলে এর দায় কার? মূল দায় অবশ্যই চিকিৎসা-শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃৃপক্ষের। শুধু টাকার দিকে তাকিয়ে পাস করিয়ে বিপুলসংখ্যক চিকিৎসককে অখ্যাত বা ছোট-মাঝারি পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় কেন?
সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেও অনেকে বিসিএসে উত্তীর্ণ হন না, আবার বেসরকারি কলেজ থেকে পাস করে কেউ কেউ উত্তীর্ণ হচ্ছেন। আসলে বিসিএস পাস করা চিকিৎসকের মানের নিয়ামক মানদণ্ড হতে পারে না। চিকিৎসকের যোগ্যতার পরিচয় লব্ধ বিদ্যার বাস্তব প্রয়োগে। সেদিকেই বরং নজর দেওয়া উচিত। সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরাই যাতে সে সুযোগ পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসাপ্রার্থীর মানসিকতায়ও কিছু সমস্যা রয়েছে। তাঁরা সাইনবোর্ডে চোখ রাখছেন বেশি। একসময় বেসরকারি খাতের বা স্বনিয়োজিত চিকিৎসকরা এ দেশে সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা করেছেন। এখন সম্ভব হচ্ছে না কেন, ভেবে দেখা উচিত।