কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ২৬ রাজনৈতিক দল, ৬ পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করা ৩২২ নামের মধ্য থেকে ১০ জনের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে সার্চ কমিটি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। এই ১০ জন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে নামের তালিকা আজকালের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে সার্চ কমিটি। এরপর রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ৪ জনকে কমিশনার নিয়োগ দেবেন আগামী সপ্তাহে। মঙ্গলবার বিকেলে চতুর্থ দফায় আরও ক’জন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সার্চ কমিটি নিজেরাও বৈঠক করে। এ সময় নাম চূড়ান্ত করার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। এদিকে কে হচ্ছেন সিইসি এবং অন্য ৪ নির্বাচন কমিশনারইবা কারা হচ্ছেন এ নিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।
সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ১২ ফেব্রুয়ারি ২ দফা ও ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফা এবং মঙ্গলবার চতুর্থ দফা বিশিষ্টজনদের বৈঠক করে নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত নেয় সার্চ কমিটি। আগের ৩ দফা বৈঠকে বিশিষ্টজনদের দেয়া প্রস্তাব অনুসারে নির্বাচন কমিশনের জন্য ২৬ রাজনৈতিক দল, ৬ পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করা ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। এতে অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ১০০ জন সাবেক আমলা ছাড়াও বিচার বিভাগ, শিক্ষাবিদ, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম স্থান পায়। আর এই ৩২২ জন থেকেই অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন ১০ জনকে বেছে নিচ্ছে সার্চ কমিটি।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে নাম জমা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল সার্চ কমিটি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকেও ইমেলে নাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়। এরই মধ্যে প্রথমে আওয়ামী লীগসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও ৬টি পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে আরও অনেকে নাম প্রস্তাব করে। ১৫টি রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব না করায় পরে আরও দুদিন সময় বাড়ানো হয়। এর পর ওই ১৫টি দল থেকে দুটি দল নাম জমা দিলেও বিএনপিসহ ১৩টি দল দেয়নি।
সার্চ কমিটিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা সুপারিশ করতে ১৫ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। তাই তাদের হাতে সময় আছে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে সার্চ কমিটি এতদিন সময় নেবে না। আজকালের মধ্যেই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন আর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে কোন তাড়া নেই। কারণ, নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে কিছুদিন দেরি হলেও এতে আইনগত কোন সমস্যা নেই। তবে আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির সুপারিশ করা তালিকা থেকে ১ জনকে সিইসি ও ৪ জনকে কমিশনার নিয়োগ করবেন।
পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে না পারায় অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে ৪ জন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি। সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ চৌধুরী। সার্চ কমিটির সভাপতি আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির অন্য ৫ সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বৈঠকে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল জানান, ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার আগে বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাব করলে তা আমলে নেবে সার্চ কমিটি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সৎ, সাহসী ও মেধাবী ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছি। আর রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নামের সুপারিশ যাবে সার্চ কমিটিকে তা প্রকাশের প্রস্তাব করেছি।
সূত্র মতে, নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য সার্চ কমিটি ১০ নাম প্রায় চূড়ান্ত করে ফেললেও নির্বাচন কমিশনে স্থান পেতে যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ কেউ এখনও দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে জোরালো চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন তালিকায় নিজের নাম সংযুক্ত করতে। তবে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সার্চ কমিটি কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এই দৌড়ঝাঁপে কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানা যায়।
দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠনে বিরামহীনভাবে কাজ করছে সার্চ কমিটি। তাই সার্চ কমিটির তালিকা প্রস্তুতির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসায় নতুন ইসিতে কারা আসছেন এবং কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কারা হচ্ছেন অন্য কমিশনার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য সিইসি ও ইসি হিসেবে আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে বেশ ক’জনের নাম।
নতুন নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য সিইসি হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী মোহাম্মদ সফিউল আলমের নাম। তিনি ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিনয়ী, সৎ ও সজ্জন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার নামও সম্ভাব্য সিইসি হিসেবে জোরালো আলোচনায় আছে। তিনি ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বিসিএস (প্রশাসন) ৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা। তাই তাকে সিইসি নিয়োগ করলে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
সম্ভাব্য সিইসি হিসেবে আরও আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, নজিবুর রহমান এবং সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যাান ও নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকের নাম। এ ছাড়া আরও রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক সচিব শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, অধ্যাপক ড. মোঃ মিজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য ড. হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাবেক সচিব আবুল আলম শহীদ খান, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, হেলালউদ্দিন আহমেদ, জাফর আহমেদ খান ও মুহিবুল হকের নামও।
আর ৪ নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন সাবেক সচিব কামরুন নাহার, কানিজ ফাতেমা, কামালউদ্দীন তালুকদার, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, সাবেক সচিব মুশফিকা ইকফাত, অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ফাইজুর রহমান, নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর, ফেমার সাবেক সভাপতি মিসেস মনিরা খান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মিস রাশিদা সুলতানা, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস এম আনোয়ার বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর নাসরিন আহমেদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. ফরিদা আবিদ খানম, বারডেম হাসপাতালের সাবেক মহাপরিচালক ডাঃ নাজমুন নাহার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাকিয়া পারভীন, অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত, নির্বাচন কমিশন থেকে সদ্য পদত্যাগকারী যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম ও সাবেক ক’জন সেনা কর্মকর্তা ও জেলা জজের নাম।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে। সার্চ কমিটির অন্য ৫ সদস্য হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির কর্ম সম্পাদনে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে। আইন অনুযায়ী এ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ১০ ব্যক্তির নাম সুপারিশ করতে বলা হয়। তবে এ কমিটি তার আগেই এ কমিটি সুপারিশ পেশ করতে পারবেন। আর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির কাছ থেকে নামের সুপারিশ পাওয়ার পর সেখান থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব না নিতে পারলেও কোন সমস্যা নেই। যেদিন থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন কাজ দায়িত্ব নেবে সেদিন থেকে তাদের কার্যকাল শুরু হবে। আর নতুন ইসি দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত কমিশন সচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কর্মচারীরা রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে তারা কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
দেশে এ পর্যন্ত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ২০১২ সালে জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৭ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ওই সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুসারে ২০১৭ সালে ৫ বছরের জন্য গঠন করা হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
১৭ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। এ আইন পাসের উদ্দেশ্যে ২৩ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপন করেন। ওইদিনই বিলটি যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন স্পীকার। এর পর ওই কমিটি বিলটি রিপোর্ট আকারে সংসদে উপস্থাপনের পর এর ওপর ১২ জন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ছাঁটাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দেন। এর পর কিছু সংশোধনীসহ ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের শিরোনামেও সামান্য সংশোধন হয়। সংশোধনীসহ বিলটি পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ শিরোনামে। ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি এ বিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়। ওইদিনই জাতীয় সংসদ থেকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর গেজেট প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সংবিধান নির্দেশিতভাবে এবারই প্রথম জাতীয় সংসদে আইন পাস করে সে আইনের আলোকে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন এবং তাদের যোগ্যতা কি হবে সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারী বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে যদি কেউ অপ্রকৃতস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হন, অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দন্ডিত হন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) এ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত হন এবং আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে কেউ অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না।