সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
একাদশ জাতীয় সংসদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ জানুয়ারী সিলেট সফরে আসছেন। ওইদিন তিনি সিলেটে পৌঁছে প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরানের মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধান অথিতির বক্তব্য রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার কাজ শুরু করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেট নগরীতে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সম্ভব্যপ্রার্থীরা জোরেশোরে অসংখ্য ছোট-বড় তোরণ ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন আলীয় মাদ্রাসা মাঠের আশপাশ এলাকাসহ পুরো নগরী। এখন সিলেটবাসী প্রস্তুত রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাতে।
ওইসব সম্ভাব্য প্রার্থী থেকে শুরু করে জেলা ও মহানগর নেতাকর্মীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ তথা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিলবোর্ড ভাড়া নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশি হিসেবে ব্যানার টাঙ্গিয়ে জানান দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও ৩০ জানুয়ারী আলিয়া মাদ্রাসার মাঠকে জনসমদ্রে পরিনত করতে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর নেতাকর্মীরা ঘুমকে হারাম করে মাইকিং, মিছিল-মিটিংসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওইদিন জনসভায় বক্তব্য দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও অনেকগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর সঙ্গে সিলেটের উন্নয়নে নতুন কোনো ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আসবে কি না সেই প্রত্যাশায় এখন সাধারণ মানুষ জনের মধ্যে। শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের সরকার এমনটাই মনে করেন সিলেটের সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের আগমনে সিলেটবাসীর যেসব স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেগুলো আলোর মুখ দেখবে? তারা মনে করছেন, দলের ভেতরে চলছে দ্বন্দ্ব-কলহ। এছাড়া এ দ্বন্দ্ব কলহের কারনে সিলেটে বেশ কিছু নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্যে এসব খুন-খারাপি বন্ধসহ সিলেটের সাধারণ লোকজনের উন্নয়ন হবেতো?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের শেষদিকে জাতীয় নির্বাচন। সে হিসাবে প্রায় এক বছর হাতে রেখেই ভোটের মাঠে নামছে শাসক দল। এর অংশ হিসেবে ৩০ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর এ সফর নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত সিলেটের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। সব আয়োজন প্রায় শেষ হতে চলেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সিলেটবাসী। তিনি আসবেন, উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবেন। সিলেটের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবারই আন্তরিক। যার প্রমাণ মেলে গত কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর থেকে। নির্ধারিত উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও তিনি সিলেটের উন্নয়নে সিলেটবাসীর জন্য নতুন সুখবর দিয়েছেন। এবারের সফরেও তিনি অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন এবং উদ্বোধন করবেন। তবে বরাবরের মতো এবারও সিলেটবাসী রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দারুণ কোন সুখবরের অপেক্ষায়। শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। এর ঠিক ১১ মাস পর একই বছরের নভেম্বর মাসে তিনি একই স্থানে ভাষণ দেন। এর প্রায় ১১ মাস পর আবারো সিলেটে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ নবগঠিত সদর দপ্তর ১১ পদাতিক ব্রিগেডের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেবারে এই আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করা হয়েছিল। তবে, ঐ সময় নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি সামনে আসায় পরবর্তীতে ওই সমাবেশ বাতিল হয়ে যায়। এদিকে গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে গৃহবিবাদ মেটানোর কাজও। দলের জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলার নেতাদের পাশাপাশি সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্ন্তদ্বন্দ্ব, কলহ, বিবাদ এবং দূরত্ব ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়।
সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা শামীম ইকবাল বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমণে সিলেটের মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাই ৩০ জানুয়ারি বিশ্বনেত্রীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য পুরো আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। তাকে স্বাগত জানাতে সিলেটবাসী প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরে ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় জনসমুদ্র পরিণত করতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পুণ্যভূমি সিলেট আগমনে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আগামি নির্বাচনে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীকে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পুনরায় আওয়ামীলীগকে নির্বাচিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর জনসভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর সফল করতে তিনি ইতিপূর্বে নেতাকর্মীদের মিছিল আর ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জনসমাবেশস্থলে আশার আহবান করেছেন।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রথমই শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সিলেটের এ কর্মসূচি। সফরের মূল লক্ষ্য জেলা-উপজেলায় কর্মী সভা, বর্ধিত সভা এবং জনসভার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড জনগণকে আবারও মনে করিয়ে দেয়া।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনী বছর। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। দলের সভাপতি নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের মন জয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যা কার্যত নির্বাচনী প্রচারণাই। যারা মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক, তারা এলাকায় ছোটাছুটি করছেন। চলতি মাসেই সিলেটে সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নিজেদের মাঝে কোনো দূরত্ব থাকলে সেগুলো কমিয়ে আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করে যাচ্ছেন।