জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা প্রভৃতি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের প্রতিনিধিত্বের আওতা বাড়ানো। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারে সমাজের বিভিন্ন অংশের, বিশেষত নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যই এ ব্যবস্থা। এর জন্য অনেক দিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন নারীরা। সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ও ধর্মীয় বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁদের। পর্যায়ক্রমে তাঁদের ক্ষমতায়নবিষয়ক রাষ্ট্রীয় নীতির আলোকে তাঁদের জনপ্রতিনিধিত্বের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু কাগজপত্রে যতটা অগ্রগতি হয়েছে, বাস্তবে ততটা হয়নি। সংরক্ষিত নারী আসনের প্রতিনিধিরা জাতীয় ও স্থানীয় উভয় পর্যায়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন। কর্ম এলাকা নির্ধারণ, দায়িত্ব বণ্টন, বরাদ্দ প্রভৃতি বিষয় এখনো সুনির্দিষ্ট নয়। উপজেলা পরিষদে সমস্যার আরো একটি মাত্রা রয়েছে সংরক্ষিত আসনের নারী প্রতিনিধিরা মেয়াদ পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। কিন্তু সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা এক বছরও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান না। ২০১৫ সালের জুনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিছু ব্যতিক্রম বাদে তাঁদের পদ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি শূন্য হয়ে যায়। এক হাজার ৪৯১টি শূন্যপদে উপনির্বাচন হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। বিজয়ীরা বছরখানেক সময় পেতে পারেন। কারণ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শূন্য আসনগুলোর ৮৭৩টিতেই ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এসব আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এবার এত বেশি আসনে একক প্রার্থী হওয়ার অন্যতম কারণ নির্বাচনে অনাগ্রহ। আর ২১৫ আসনে প্রার্থীই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে সময়ের ব্যবধানের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পরিষদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইনের বিধি-বিধানের ব্যাখ্যার ঘাটতি; সময়মতো সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে না পারা; উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনের মধ্যে কালক্রমিক সমন্বয়ের অভাব, আইনগত জটিলতা, নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপকীয় সামর্থ্যের ঘাটতি, নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রাধিকার, রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধি প্রভৃতি কারণে উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের প্রতিনিধিরা শুধুই শোভা হয়ে থাকছেন। কারো কারো অভিযোগ, এই পদগুলো নিয়ে এক ধরনের খেলা চলছে। নারী সদস্যদের ঠিকমতো ভাতাও দেওয়া হয় না। এসব অসংগতি দ্রুত দূর করা উচিত। আইনের ব্যাখ্যা ও বিধি-বিধান স্পষ্ট করা দরকার। না হলে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের শুভ উদ্দেশ্যে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা কোনো কাজে আসবে না।