কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়াই রাজধানীর বড় সাতটি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাতটি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, অন্যদিকে পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও ক্লাস শুরুর দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেছে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের মাঝামাঝি কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে গত বছর অক্টোবর মাসে। নভেম্বরে ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। গত বৃহস্পতিবার ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশ ও তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরুর দাবিতে আবারও নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেয় তারা।
রাজধানীর বড় সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। কিন্তু এই সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আপত্তি ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই অধিভুক্তির নেপথ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যের দ্বন্দ্বই যে মূল কারণ ছিল, এমন খবরও ওই সময় গণমাধ্যমে এসেছে। সরকারের তরফ থেকে অধিভুক্তির নির্দেশনা মানতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিজেদের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়। এখন নতুন করে অধিভুক্ত সাতটি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের দেড় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার তারিখ, ফল ঘোষণা ও সিলেবাস প্রণয়নে স্বাভাবিকভাবেই বিপত্তিতে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীতল সম্পর্ক তো আছেই। নানা জটিলতাও দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে, সাতটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ওই শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিলেও ইনকোর্স পরীক্ষা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ফল প্রকাশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। সেশনজটের আশঙ্কাও তো রয়েছে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রে বসে সমস্যার সমাধান করতে হবে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হলে তার দায় কে নেবে? আমরা আশা করব, এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে একটি সমাধানসূত্র উভয় পক্ষ বের করবে।