নবীগঞ্জ পৌরসভায় ২৪ বছরেও স্থাপিত হয়নি ময়লা পরিশোধের ডাম্পিং স্টেশন

21

নবীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দুই যুগেও (২৪ বছরে) স্থাপিত হয়নি ময়লা পরিশোধনের ডাম্পিং স্টেশন। পৌরসভার আওতাধীন একাধিক সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে পৌরশহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শাখা বরাক নদী সহ একাধিক স্পট। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদের দুর্গন্ধ এখন নিত্যসঙ্গী।
পৌরশহরকে বেষ্টনকারী শাখাবরাক নদীটি এখন ময়লার ভারে নদী থেকে খালে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ স্থান ময়লা ফেলায় নদীর পানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া ওই নদীতে বর্জ্য ফেলায় পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত হলেও পৌর শহরে বাস করা অনেকে গোসলসহ গৃহস্থালী কজে ওই পানি ব্যবহার করছেন। নির্দিষ্ট স্থান এবং অপরিকল্পিতভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হতে যাচ্ছে। ময়লায় বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল এবং গবাদি পশুদের বিচরণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দুর্গন্ধে পরিণত হচ্ছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি ওই স্থান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে পৌরবাসীর ক্ষোভ থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি তারা জমির অভাবে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করতে পারছেন না।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে স্থাপিত নবীগঞ্জ পৌরসভা ২০০৫ সালে ‘গ থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে ও ২০১৩ সালে খ থেকে ক (প্রথম) শ্রেণীতে উন্নীত হয়। প্রায় ৯.৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার বিশ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। নাগরিক সুবিধার জন্য রয়েছে ২টি হাটবাজার, ১টি কসাইখানা, ৪২ কিলোমিটার পাকারাস্তা, কাঁচারাস্তা ৮ কিলোমিটার, এ ছাড়াও পাঁকা ড্রেন রয়েছে ৬ কিলোমিটার, কাঁচা ড্রেন ১.৫ কিলোমিটার, সড়কবাতি ৫৫০টি।
পৌর শহরের মধ্য বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ ছালিক মিয়া, মাহবুবর রহমান রাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন খালে বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধে বাস করতে হয়। পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের রুদ্র গ্রাম সড়কের শিবপাশা ও নোয়াপাড়া আ/এ এলাকার বাসিন্দা সুমন দাশ ও এরশাদ মিয়া বলেন, নোয়াপাড়া এলাকার সড়কের প্রবেশ মুখে ব্রিজ ও রাস্তার একপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে। আমরা ওই ময়লার দুর্গন্ধে এখন অতিষ্ঠ। এছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল চলাকালীন সময় এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে কাপড় পেঁচিয়ে কোনোরকমে এলাকা পার হয়।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, বর্জ্য-আবর্জনাযুক্ত পানি ব্যবহারে মানুষের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য থেকেও একই রকম ঝুঁকি থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম জানান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশবান্ধব পৌরসভার জন্য ডাম্পিং জোন প্রয়োজন। এ ছাড়াও পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের ময়লা-আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করতে পারে। তাদের সংগৃহীত বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন করা সম্ভব।
এ দিকে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ববি মজুমদার জানান, পৌর শহরের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাম্পিং স্টেশন একান্ত প্রয়োজন। ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া দানবীর ব্যক্তি কাছ থেকে ব্যক্তি উদ্দ্যোগে জায়গা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। জায়গা পেলে এই পৌরসভায় এই সমস্যা আর থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী জানান, আমরা পৌরশহরের ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করার উদ্যোগ নিলেও জায়গা না পাওয়ায় ডাম্পিং জোন স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। শহরের রাস্তাঘাট সহ ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আবর্জনা ডাম্পিং করতে না পারায় পৌরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমি ডাম্পিং জোনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি জায়গা চেয়েও নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত তা পাইনি। ব্যক্তিগত উদ্দোগে জায়গা প্রাপ্তির চেষ্টা চলছে।আশা করি জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে কিছু দিনের মধ্যে ডাম্পিং জোন নির্মাণ করা হবে।