কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি একেবারে আক্ষরিক অর্থেই অচলাবস্থা দেখা দেয় ট্রাম্প প্রশাসনে। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজেট বাড়ানো সংক্রান্ত একটি বিলে সিনেটররা একমত হতে না পারায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে জরুরি কিছু সেবা ছাড়া সরকারের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের শাটডাউনে প্রায় সাড়ে আট লাখ কর্মীকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়। এবার এ সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ওপর এই অচলাবস্থার প্রভাব কেমন হবে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। কাতারভিত্তিক আলজাজিরা, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে শাটডাউনের কয়েকটি প্রভাবের ক্ষেত্র শনাক্ত করা হলো।
কর্মঘণ্টার ব্যাপক অপচয় : সরকারি কার্যক্রমে অচলাবস্থার ফলে সরকারের অপেক্ষাকৃত কম দরকারি কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে যেতে হবে। আর্থিক রেটিংস এজেন্সি ‘স্যান্ডার্ট অ্যান্ড পুওর’ এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বেথ আন বোভিনো মনে করেন এই অচলাবস্থার কারণে কর্মঘণ্টার ব্যাপক অপচয় ঘটবে। আল জাজিরা-কে তিনি বলেন, এই অচলাবস্থা মার্কিন অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলবে। প্রত্যক্ষ প্রভাবের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ সরকারি কর্মচারীর উৎপাদন অপ্রয়োজনীয়ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। এই শ্রমিকদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হবে। অর্থাৎ সরকার কার্যক্রম শুরু না করা পর্যন্ত তাদের বিনা বেতনে ছুটিতে থাকতে হবে। আর তাদের বেতন দেওয়া হলেও সরকার উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা, কাজ ছাড়া বসে থাকা সময় কখনও ফিরে আসে না। এ ধরনের পরিস্থিতি চলাকালে সাময়িক ছুটিতে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, কর্মীরা তাদের বেতন পেয়ে থাকেন।
হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা খাতের কর্মীরা অবশ্য সাময়িক ছুটির আওতায় পড়বেন না। সামরিক বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও এই ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
হোয়াইট হাউস : মার্কিন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুক্রবার জানানো হয়েছে, তাদের এক হাজার ৭১৫ কর্মীর মধ্যে এক হাজার ৫৬ জনকে ছুটিতে পাঠানো হবে। আর জরুরি বিবেচনায় ৬৫৯ জন তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করবেন। তারা দায়িত্ব পালনে প্রেসিডেন্টকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
সামরিক বাহিনী : নিজ দেশের বাইরে ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা দায়িত্ব পালন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। এই অচলাবস্থা তাদের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর। তবে অচলাবস্থা সপ্তাহ গড়ালে সামরিক বাহিনীর প্রায় ১৩ লাখ সক্রিয় সদস্যকে বিনা বেতনে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে। তবে সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত বেসামরিক কর্মকর্তারা অবৈতনিক ছুটি ভোগ করবেন। মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষকরাও এই ছুটির আওতায় থাকবেন।
স্টক মার্কেট : স্টক মার্কেট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কিছু কর্মীকে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে।
পর্যটন খাত : সরকারে এ ধরনের অচলাবস্থায় পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এটি পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শুধু বিদেশি পর্যটক নয়; দেশি পর্যটকদেরও হারাতে হয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোকে। এর আগে ২০১৩ সালের শাটডাউনে লিঙ্কন মেমোরিয়াল, কংগ্রেস লাইব্রেরি এবং জাতীয় আর্কাইভের মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্থাপনাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় উদ্যান : জাতীয় উদ্যান চালু রাখতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। রেঞ্জার্স ও নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্বে রেখে সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালের শাটডাউনে পার্কটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় দিনে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ দর্শনার্থী হারায় প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রাম্পের রুশ সংযোগের তদন্ত : নির্বাচনকালে ট্রাম্পের রুশ সংযোগ তদন্তে কাজ করছেন মার্কিন বিচার বিভাগের স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার। এফবিআইয়ের সাবেক এই প্রধান তার তদন্ত চালিয়ে যাবেন। বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র সিএনএন’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কর বিভাগ : শাটডাউনের ফলে কর বিভাগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ কর্মী সাময়িক ছুটিতে থাকবেন। তবে সরকার চাইলে বিকল্প উপায়ে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে পারবে। এর আগে ২০১৩ সালের শাটডাউনে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
অস্ত্র, মাদক ও অগ্নিনির্বাপণ : শাটডাউনের ফলে ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভের কার্যক্রমও ব্যাহত হবে। গান পারমিটের জন্য কেউ আবেদন করলে তাকে শাটডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ডাক বিভাগ : অচলাবস্থা চলাকালে ডাক বিভাগ চালু থাকবে। ফলে লোকজন ডাক বিভাগের সেবা পাবেন।
ওয়াশিংটন ডিসি : ২০১৩ সালের শাটডাউনে রাজধানী ওয়াশিংটনের ওপর প্রভাব পড়েছিল। তবে এবার ওই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে বদ্ধপরিকর মেয়র মুরিয়েল বাউসার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কর্তৃপক্ষ জনগণকে তাদের প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখবে।