কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে দেশের ৬৪ টি জেলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান (লিগ্যাল এইড) কমিটির মাধ্যমে সরকারি খরচে অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের ১৫ হাজার ৮৯৮ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে সরকারী খরচে অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের ১৫ হাজার ৮৯৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৬ সালে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২২০টি । পূর্বের বছরের তুলনায় মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। প্রসঙ্গত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় রাজধানীর ১৪৫, নিউ বেইলী রোডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে আটককৃত ১২ হাজার ৮৯৬ জনকে ২০১৭ সালে দেশের ৬৪ জেলা জাতীয় আইনগত সহাতা প্রদান কমিটির মাধ্যমে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে এ সহায়তা পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৯৪ জন। সরকারি আইনি সেবা প্রদান “ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন নং ১৬৪৩০”-এর মাধ্যমে ২০১৭ সালে ১৫ হাজার ৩২০ জনকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এপ্রিল ২০১৬ সালে এ সেবা চালু করা হয়। ২০১৬ এর এপ্রিল-ডিসেম্বর পর্যন্ত হেল্প লাইনে আইনগত সেবা গ্রহণ করেছিলেন ৭ হাজার ৭৬ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৮১ হাজার ৩১২ জনকে সরকারিভাবে আইনি সেবা প্রদান করেছে। এই সেবা কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে দেশব্যাপী ৬ষ্ঠ বারের মত জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আগামী ২৮ এপ্রিল পালন করা হবে। সরকারের এই আইনি সেবা প্রদানের বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৮ এপ্রিলকে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ ঘোষণা করা হয় এবং ওই বছর থেকেই প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয়ভাবে আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘বিরোধ হলে শুধু মামলা নয়-লিগ্যাল এইড অফিসে আপোষও হয়’।
এই আইনি সেবা সফল বাস্তবায়নে সরকার অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অবহিতকরণসহ জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এ আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সেবা-বান্ধব করার লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার আওতায় প্রত্যেক জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপনসহ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, চৌকি আদালত এবং শ্রম আদালতে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম চালু করা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্ণার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি আইনি সেবা প্রদান আরও বিস্তৃত ও সহজ করার লক্ষ্যে এপ্রিল- ২০১৬ সালে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন নং ১৬৪৩০ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা নিতে পারছেন।
১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন- ২০০০” প্রণয়ন করে। তারপরের সরকারগুলো আইনটি কার্যকরে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর আইনটি কার্যকরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০০০ সালে প্রণীত আইনটি অনুযায়ী “জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা” গঠন করা হয়।