রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

21

বেশ আগেই কিছু রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। পুরোপুরি মুক্ত না হলেও আরো কিছু রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ পোলিও রোগী দেখা গিয়েছিল ২০০৬ সালের নভেম্বরে; যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডিপথেরিয়া নেই। এইডস নিয়ন্ত্রিত, এখন আক্রান্তের সংখ্যা হাতে গোনা। দূর হয়েছে হাম। কলেরা বলতে গেলে নেই। যক্ষ্মাও নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সম্প্রতি এসব রোগের প্রত্যাবর্তনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার আওতায় এসেছে, তাদের কারো কারো মধ্যে উপর্যুক্ত কোনো না কোনো ব্যাধির উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, পোলিও, কলেরা-হাম-রুবেলা থেকে রক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিপথেরিয়ার বিষয়টি প্রথমে তাদের নজরে পড়েনি, এখন টিকাদান শুরু হয়েছে। এইডসও ধরা পড়েছে অনেকের মধ্যে। রোহিঙ্গারা স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিচরণ করছে, হাট-বাজারে যাওয়া-আসা করছে। ফলে তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি আছেই। এরই মধ্যে ডিপথেরিয়ায় কমপক্ষে ২৮ জন, এইডসে তিনজন ও হামে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু ডিপথেরিয়া, এইডস, হাম ও যক্ষ্মা নয়, অনেকে আরো অনেক ধরনের রোগে ভুগছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ডিপথেরিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে। তারা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ৮৫ জন এইডস রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এক হাজারের বেশি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকার কথা। অন্যান্য রোগের উপসর্গও দেখতে পাচ্ছে অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ টিম। শুরুতে পোলিওর আশঙ্কা ব্যাপকভাবে করা হয়েছিল। সবাইকে টিকাও দেওয়া হয়েছে। স্বস্তিজনক বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত কেউ পোলিওতে আক্রান্ত হয়নি। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লোকেরা দিন-রাত পানিতে ভেসে, বনজঙ্গল ভেঙে ছুটে এসেছে। তাদের শরীরে মশা, পোকা-মাকড় ও পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে। ম্যালেরিয়া-ফাইলেরিয়ার মতো রোগও পাওয়া যাচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। তারা শিশুদের ডিপথেরিয়া ও নিউমোনিয়ার টিকা দিচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, প্রচার চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে। তবে আরো সংহত কর্মসূচি দরকার। স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের আক্রান্ত হওয়া সুলক্ষণ নয়। তাদের জন্য আরো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। স্থানীয় মানুষের সচেতনতা ও সতর্কতা খুবই জরুরি। আর্থিক-সামাজিক সংযোগের কারণে তাদেরও সংক্রমিত বা আক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। বিতাড়িত বা নিয়ন্ত্রিত রোগগুলো আবার জেঁকে বসুক, এটা কাম্য হতে পারে না। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে না বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে এক করে দেখা।