এমপিওভুক্ত নয় এমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এবার আন্দোলনে নেমেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
২০১০ সাল থেকে এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকলেও নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশের পাঁচ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেশির ভাগই বিনা বেতনে সেখানে চাকরি করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ২০ লাখের মতো। প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠছে সরকারের স্বীকৃতি নিয়েই। কিন্তু বছরের পর বছর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মতো নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানও একই নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হচ্ছে। শুধু শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে না। এমপিওভুক্তি নিয়ে জাতীয় সংসদে একাধিকবার দাবি উঠলেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। নির্বাচনের বছর সামনে রেখে তাই আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন শিক্ষকরা। পালন করছেন অবস্থান কর্মসূচি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি একটি নীতিনির্ধারণী বিষয়। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। আবার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও নানা নিয়ম-কানুন মানতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ করা, সুশিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এমপিওভুক্তি অত্যন্ত জরুরি। এর সঙ্গে শিক্ষকদের জীবন-জীবিকা, মান-মর্যাদার বিষয়টিও জড়িত। আমাদের দেশে শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাঁদের জীবনযাপনের জন্য বা ন্যূনতম জীবনমান সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা জোগান দেওয়া হয় না। নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বেশির ভাগকেই জীবনযাপনের জন্য অন্য কোনো কাজ করতে হয়। শিক্ষকদের এই দীনতার কারণেই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় না। বিষয়টি মাথায় রেখেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া যেতে পারে, তেমনি ভালো প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে না পারলে শিক্ষার মান উন্নত হবে না।
শিক্ষকদের জীবন অবহেলা ও কষ্টে কাটলে তাঁদের উৎসাহ ফুরিয়ে যাবে। তাঁদের হাত দিয়ে ভবিষ্যতের সুনাগরিক বেরিয়ে আসবে কিভাবে? কাজেই এমপিওভুক্তির ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এ ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।