কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদুতের দাম বাড়লো। নির্বাহী আদেশে বেড়েছে এ দাম। এজন্য সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন। নতুন দাম কার্যকর হবে ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই।
খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের ভরিত গড় মূল্য ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইকারি (বাল্ক) দাম সব কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরেই (২৩০, ১৩২ ও ৩৩ কেভি) কিলোওয়াট ঘণ্টায় ৫০ পয়সা বেড়েছে।
সংশোধিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের ক্ষমতা বলে সরকার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ালো। বিশেষ ক্ষেত্রে বিইআরসি ছাড়াই ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্র্নিধারণ ও সমন্বয়ে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এ।
গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। পরে সংসদ অধিবেশন বসলে সেটি পরিণত করা হয় আইনে। ২২ জানুয়ারি আইনের গেজেট জারি হয়।
এ আইনের বলে সরকার প্রতি মাসে গ্যাস বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের (বাড়ানো-কমানো) ঘোষণা দিয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বিদ্যুতের নতুন দাম অনুযায়ী, আবাসিকের লাইফ লাইন (৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের জন্য ৩ টাকা ৯৪ পয়সার পরিবর্তে ৪ টাকা ১৪ পয়সা দিতে হবে। ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৪০ পয়সার জায়গায় দিতে হবে ৪ টাকা ৫২ পয়সা।
এছাড়া আবাসিকের ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা করা হয়েছে।
এছাড়া ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিকের ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৪৪ পয়সার পরিবর্তে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিটের দাম ১২ টাকা ৩ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা গুণতে হবে।
সেচ বা কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাম্পের ক্ষেত্রে আগে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল চার টাকা ৩৭ পয়সা। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা।
ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে এখন ফ্ল্যাট রেট ৯ টাকা ৪১ পয়সা, অফ পিকে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা এবং পিকে ১১ টাকা ২৯ পয়সা। আগে যা ছিল যথাক্রমে ৮ টাকা ৯৬ পয়সা, ৮ টাকা ৬ পয়সা এবং ১০ টাকা ৭৫ পয়সা।
নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে এখন ১৩ টাকা ২৩ পয়সা গুণতে হবে। শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি নতুন দাম ৬ টাকা ৬৪ পয়সা। আগে যা ছিল ৬ টাকা ৩২ পয়সা। রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ খরচ ৮ টাকা ৯ পয়সার পরিবর্তে ৮ টাকা ৪৯ পয়সা হলো।
ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের নতুর দাম ফ্ল্যাট ৮ টাকা ৪২ পয়সা, অফ পিকে ৭ টাকা ৫৮ পয়সা, সুপার অফ পিকে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা এবং পিকে ১০ টাকা ৫৩ পয়সা।
এছাড়া ‘বাণিজ্যিক ও অফিস’ শ্রেণিতে ইউনিট প্রতি ফ্ল্যাট রেট ১০ টাকা ৮২ পয়সার পরিবর্তে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা, অফ পিকে ৯ টাকা ৭৩ পয়সার পরিবর্তে ১০ টাকা ২২ পয়সা ও পিক সময়ে ১২ টাকা ৯৮ পয়সার পরিবর্তে ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা দিতে হবে।
ভর্তুকি কমাতে এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি, যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণার পরই খুচরায় দাম বাড়াতে আবেদন করে বিতরণ সংস্থাগুলো। সেসব আবেদন কারিগরি কমিটিতে মূল্যায়ন শেষে তা গণশুনানিতে আসে।
এরপর গত ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়, যা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল।