১০২ ও ১০৩তম আইন ও প্রশাসনিক কোর্সের সমাপনীতে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা রয়েছে, মানুষের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে প্রশাসনের ক্যাডার কর্মকর্তাদের যে বিশাল দায়িত্ব রয়েছে, সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে কর্মকর্তাদের নিরলস কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মনে করিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টিশীল কর্মকর্তাদের সৃষ্টিশীলতা ও নিষ্ঠা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মূল্যবান ভূমিকা রাখবে।
গতিশীল জনপ্রশাসন যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। আর তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর। রাষ্ট্রের এই ক্ষেত্রটির ওপর রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণও নির্ভর করে। জনপ্রশাসনে কর্মরত সবাইকে মনে রাখতে হবে, তাঁরা জনগণের সেবক। একই সঙ্গে তাঁরা সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাহক। আর সে কারণেই তাঁদের দায়বদ্ধতা সব সময় জনগণের কাছে। অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা তাঁদের কর্তব্য। আর সেই কর্তব্য পালনে তাঁদের জনগণের কাছে যেতে হবে। সেবক হিসেবে সেবা করতে হবে জনগণের একজন হয়ে।
সরকার জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সুদক্ষ করে গড়ে তোলার ব্যাপারেও যথেষ্ট আন্তরিক। সর্বশেষ বেতন স্কেলের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন যেমন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে, তেমনি তাঁদের আন্তরিক উদ্যোগের স্বীকৃতি দিতে বিভিন্ন পদক প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। সৃজনশীল কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে গঠন করা হয়েছে উদ্ভাবনী তহবিল। কর্মকর্তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগও সৃষ্টি করা হয়েছে।
যেকোনো রাজনৈতিক সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে দক্ষ ও যোগ্য জনপ্রশাসনের ওপর। সরকারের নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে জনপ্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সব সরকারই জনপ্রশাসনকে তাদের চিন্তাভাবনা ও মেয়াদভিত্তিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করে। বাস্তবায়নে তাদের সহায়তার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় সরকার এখন পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে পারছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃত্ব পরিষেবা, অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সার্বিক স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে আজকের বাংলাদেশ। দেশের এই অগ্রযাত্রা অনেকাংশেই নির্ভর করছে বর্তমান জনপ্রশাসনের ওপর। নবীন কর্মকর্তারা বিষয়টি অনুধাবন করে নিজেদের দেশসেবায় নিয়োজিত করলে বাংলাদেশের অগযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের আন্তরিক ও তৎপর হতে হবে। সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে দক্ষতা কাজে লাগানো গেলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহজ হয়ে যায়। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। দেশ ও জনগণের কল্যাণে তাঁরা নিয়োজিত হবেন। তাঁদের সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় বাংলাদেশ যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিবাচক ও গতিশীল জনপ্রশাসনই পারে দেশের সার্বিক চিত্র বদলে দিতে।