স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে হকারদের কবল থেকে দখলমুক্ত হচ্ছে না ফুটপাত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাস্তা। হকাররা এখন রাস্তার উপর পণ্যের পরসা সাজিয়ে পুরোদমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন ও সিটি কপোরেশন নিরভভূমিকা পালন করছেন। সম্প্রতি কিছু ফুটপাত দখলমুক্ত হলেও জাতির গৌরবের দুটি নিদর্শনের সামন সংশ্লিষ্টদের নজর এড়িয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পার্শ্ববর্তী বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের সামন ও তার আশপাশে ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জাতীয় দিবসগুলো বাদে প্রতিদিন নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট সংলগ্ন এই দুটি স্থাপনার সামনে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন হকাররা। একই অবস্থা দেখা যায় শহীদ মিনারের ঠিক উল্টো দিকে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সামনেও। এনিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তাতে ভ্রƒক্ষেপ নেই।
সরজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ভ্রাম্যমান দুটি চায়ের দোকান রয়েছে। শহীদ মিনারের উত্তর দিকের ফটকের সামনে বিভিন্ন ধরণের কাপড় নিয়ে বসছেন হকাররা। একইভাবে রাস্তার উল্টো দিকে মহিলা কলেজের সামনের ফুটপাতে পেন্ট, শার্টসহ বিভিন্ন ধরণের কাপড় নিয়ে লাইন ধরে বসে হকাররা। এতে ফুটপাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে হাঁটাচলা করাও সম্ভব হচ্ছে না। শুধু শহীদ মিনারের সামন নয় নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, রাজা জিসি রোড, কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার সড়ক ও বন্দরবাজার এলাকায় হকাররা ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার উপর পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রশাসন নিরভ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারীদের তালিকা জমা দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন। এই তালিকার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ২৬ দখলদারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, যাদের কয়েকজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। কিন্তু সিসিক বা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগের বাইরে রয়ে গেছে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের সামনের রাস্তা ও ফুটপাত।
সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের সদিচ্ছার থাকলে শহীদ মিনারের সামনে এভাবে হকাররা বসতে পারত না। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকবল সংকটের কথা বলা হয়। যা সবসময় মেনে নেওয়ার মত নয়। অবশ্য শুধু প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে রাজি নন মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মণ। এক্ষেত্রে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এবং এসব জায়গার হকারদের কাছ থেকে পণ্য কেনা বর্জন করলে তারা আর ওখানে বসবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্মৃতিসৌধের সামনে হকাররা এমনভাবে বেডশিটসহ বিভিন্ন পণ্য যেভাবে সাজিয়ে রাখে। তাতে ভেতরের স্থাপনা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। একইভাবে শহীদ মিনারের সামনে হকাররা থাকায় প্রধান ফটকের সামনে জটলা বাঁধা থাকে। এতে কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায় নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে সিটি কর্পোরেশনের কথা বলেন। কিন্তু এসব দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে। শহীদ মিনারের সমানে এমন পরিস্থিতি ‘আদালত অবমাননার সামিল’ বলেও মন্তব্য করেন ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।
মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) ফয়সল মাহমুদ বলেন, এখন থেকে এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।