স্পোর্টস ডেস্ক :
এক বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে সাকিব-আফ্রিদি-পোলার্ড-নারাইনদের ঢাকা ডায়নামাইটস। টুর্নামেন্টের ১৩তম ম্যাচে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয় সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস ও মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটান্স। দুই দলের দুই ক্যারিবীয়ান কার্লোস ব্রাথওয়েইট এবং কাইরন পোলার্ড ব্যাট হাতে মিরপুরে ঝড় তুলেছিলেন।
দু’দলেরই লক্ষ্য ছিল টানা তৃতীয় জয়। আগে ব্যাট করা খুলনা নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫৬ রান। ২৯ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্রাথওয়েইট। জবাবে, ঢাকা ৬ উইকেট হারিয়ে ১ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয়। কাইরন পোলার্ড ব্যাট হাতে ২৪ বলে ৫৫ রান করেন। জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ডায়নামাইটস দলপতি সাকিব আল হাসান। পেসার মোহাম্মদ শহীদকে বসিয়ে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে নাদিফ চৌধুরীকে যুক্ত করে ঢাকার টিম ম্যানেজমেন্ট। খুলনা একাদশে পরিবর্তন দু’টি। আকিলা ধনাঞ্জয়া ও ধীমান ঘোষের কাছে জায়গা হারান চাদউইক ওয়াল্টন ও মোশাররফ হোসেন।
ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে খুব একটা স্বস্তি পায়নি খুলনা। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে করেন ২৪ রান। মাইকেল ক্লিনগার ১৪ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। তিন নম্বরে নেমে ধীমান ঘোষ করেন মাত্র ২ রান। দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফেরেন ১০ বলে ১৪ রান করেন। এরপর কিছুটা হাল ধরেন রিলে রুশো এবং কার্লোস ব্রাথওয়েইট। ৩৩ বলে ৫৪ রান তুলে নেয় এই জুটি। ৩০ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ৩৪ রান করেন রুশো। ২৫ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্রাথওয়েইট। ৪টি চার আর ৬টি ছক্কায় ২৯ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্রাথওয়েইট। আরিফুল হক ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ঢাকা ৭ বোলার ব্যবহার করে। শহীদ আফ্রিদি ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১টি, সাকিব আল হাসান ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১টি, আবু হায়দার রনি
৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২টি, সুনীল নারাইন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। মোসাদ্দেক হোসেন ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। কাইরন পোলার্ড ১ ওভারে ১৩ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। খালেদ আহমেদ ১ ওভারে ৯ রান দিয়ে উইকেট পাননি।
১৫৭ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকার শুরুটা বাজে হয়। দলীয় ৪১ রানের মাথায় বিদায় নেন টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান। এভিন লুইস ৪, সুনীল নারাইন ৭, শহীদ আফ্রিদি ১, ক্যামেরন ডেলপোর্ট ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। আর সাকিবের ব্যাট থেকে ১৭ বলে আসে ২০ রান।
এরপরই ঘুরে দাঁড়ান কাইরন পোলার্ড। জহুরুল ইসলামকে নিয়ে ৩৭ বলে ৭৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন তিনি। বিদায় নেওয়ার আগে মিরপুরে ঝড় তোলেন ব্যাট হাতে। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ২৪ বলে করেন ৫৫ রান। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার এবং ৬টি ছক্কার মার। জহুরুল ইসলাম ৩৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোসাদ্দেক হোসেন ১২ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।
খুলনার আবু জায়েদ ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ১টি, শফিউল ইসলাম ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ২টি, জোফরা আরচার ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ১টি, ধনাঞ্জয়া ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ১টি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ১টি
উইকেট তুলে নেন। শেষ ওভারে আসেন ব্রাথওয়েইট। ৬ বলে ঢাকার দরকার ছিল ৬ রান। ব্রাথওয়েইট প্রথম দুটি বল ডট দেন। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে সিঙ্গেল হয়। পঞ্চম বলে জহুরুল বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় পাইয়ে দেন ঢাকাকে। ২.৫ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন ব্রাথওয়েইট। এই ম্যাচের আগে সিলেট পর্বে গত ৫ নভেম্বরের ম্যাচে খুলনাকে ৬৫ রানে হারিয়ে জয়ে ফেরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস। দু’দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরে টানা দুই ম্যাচ জিতে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। বিপিএলের পঞ্চম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে (৪ নভেম্বর) সিলেট সিক্সার্সের কাছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার মানে ঢাকা। সিলেটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনাকে হারানোর পর ঢাকা পর্বের (১১ নভেম্বর) প্রথম দিনে সিলেটের বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধ নেয় সাকিবের দল। নাসিরদের ১০১ রানে থামিয়ে ৮ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
অন্যদিকে, সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ছন্দে ফেরে খুলনা টাইটান্স। ঢাকায় এসে মোমেন্টাম ধরে রাখে মাহমুদউল্লাহর টিম। আগের ম্যাচে তারা চিটাগং ভাইকিংসকে ১৮ রানে পরাজিত করে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: চার উইকেটে জয়ী ঢাকা ডায়নামাইটস।
খুলনা টাইটান্স ইনিংস: ১৫৬/৫ (২০ ওভার)
(নাজমুল হোসেন শান্ত ২৪, মাইকেল কলিঙ্গার ১০, ধীমান ঘোষ ২, রিলি রুশো ৩৪, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৪, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ৬৪*, আরিফুল হক ৪*; খালেদ আহমেদ ০/৯, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০/১৫, শহীদ আফ্রিদি ১/২৩, সাকিব আল হাসান ১/৩২, আবু হায়দার রনি ২/৪০, সুনিল নারিন ১/২২, কাইরন পোলার্ড ০/১৩)।
ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস: ১৫৭/৬ (১৯.৫ ওভার)
(এভিন লিউইস ৪, সুনিল নারিন ৭, শহীদ আফ্রিদি ১, ক্যামেরন দেলপোর্ট ২, সাকিব আল হাসান ২০, জহুরুল ইসলাম ৪৫*, কাইরন পোলার্ড ৫৪, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১৪*; আবু জায়েদ রাহি ১/২৪, শফিউল ইসলাম ২/২৪, জফরা আর্চার ১/২৬, আকিলা ধনঞ্জয়া ১/১৭, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ০/৩৪, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১/২৯)।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: জহুরুল ইসলাম (ঢাকা ডায়নামাইটস)।