সিলেট বিভাগের ৩ জেলা সহ ৫২ জেলায় স্থাপন হচ্ছে পানি পরীক্ষাগার

25

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকার দেশের ৮টি বিভাগের অধীনস্ত ৫২ জেলায় পানির গুণগত মান পরীক্ষার জন্য পানি পরীক্ষাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ৫২ জেলার মানুষ পানের জন্য সুপেয় বিশুদ্ধ পানি পাবেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করাই এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা রয়েছে। এসব জেলায় পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সরবরাহ করা পানি যেটুকু আছে তার গুণগত মান ভালো নয়। কারণ, তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার কোনও সুযোগ নাই। তাই নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় এসব পানি পরীক্ষাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন পরীক্ষাগার স্থাপনের মাধ্যমে পানি পরীক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী করা ও গতিশীলতা বাড়ানো, পানি পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সক্ষমতা বাড়ানো।
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনে করে স্থানীয় সরকার বিভাগের নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই পানি পরীক্ষাগার নাই এরূপ ৫২টি জেলা সদরে ৫২টি নতুন পানি পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। পানি পরীক্ষার সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে জনসাধারণ নিরাপদ পানি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে এবং পানিবাহিত নানাবিধ রোগ হতে মুক্ত থাকতে পারবে। এতে জনগণের নাগরিক সুবিধা বাড়বে।
দেশের ৮টি বিভাগের যে ৫২টি জেলায় এই পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগের ১১টি জেলা, চট্টগ্রামে বিভাগের ৯টি জেলা, রাজশাহী বিভাগের ৬টি জেলা, খুলনা বিভাগের ৮টি জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের ৩টি জেলা, বরিশাল বিভাগের ৫টি জেলা, সিলেট বিভাগের ৩টি জেলা ও রংপুর বিভাগের ৭টি জেলা।
ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে- নরসিংদী, শরিয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ। খুলনা বিভাগের ৮টি জেলা হচ্ছে যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বাগেরহাট। ময়মনসিংহ বিভাগের ৩টি জেলা হচ্ছে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা। বরিশাল বিভাগের ৫ জেলা হচ্ছে ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা। সিলেট বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ । রংপুর বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম। বিভাগীয় সদরগুলোর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই “পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ” শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে এবং তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন পানি পরীক্ষাগারের সামগ্রিক সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্পটির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে নতুন পরীক্ষাগার স্থাপনের মাধ্যমে পানি পরীক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করা, পানি পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি চলতি ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপি’তে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় নতুন পরীক্ষাগারের নিমিত্ত বিদ্যমান ভবন সম্প্রসারণ করা হবে ৫২টি। পরীক্ষাগারের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। পানি পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনা হবে। ৫২ জেলার জন্য ৫২ সেট আসবাবপত্র, মোটরযান, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ, অফিস ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ, প্রকল্পের জন্য জিপ গাড়ি, মোটর সাইকেল কেনাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায়-২ এ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের বিষয়ে নিম্নরূপ লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ রয়েছে: সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী নগরবাসীর অনুপাত ১০০ ভাগ-এ উন্নীত করা, স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী গ্রামীণ জনগণের অনুপাত ৯০ শতাংশে উন্নীত করা। দেশের ৫২টি জেলায় মোট ৫২টি পানি পরীক্ষাগার স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে বিধায় প্রকল্পটি সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, এ কারণেই প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন করেছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এর জন্যই ৫২টি জেলা সদরে ৫২টি নতুন পানি পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। এতে জনগণের নাগরিক সুবিধা বাড়বে। এ ছাড়াও এসডিজি বাস্তবায়নে প্রকল্পটির কোনও বিকল্প নাই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের মাঠ পর্যায়ের মানুষ সুপেয় পানি পাবে। আমরা অনেকেই জানি না যে পানি আমরা পান করছি তা শতভাগ নিরাপদ কিনা। যে কারণে আমরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছি। এ ধরনের পরীক্ষাগার নির্মিত হলে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা বাড়বে।