কাজিরবাজার ডেস্ক :
রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মিয়ানমার সরকার।
মালয়েশিয়ায় স্থাপিত এ ট্রাইব্যুনাল শুক্রবার এ রায় ঘোষণা করে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইন।
খবরে বলা হয়, আদালতে গঠিত সাত সদস্যের বেঞ্চ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিন এবং অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধে নির্যাতিত ২০০ জনের সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে শুনানি শেষে এ রায় দেয়।
বেঞ্চের প্রধান আর্জেন্টিনার গণহত্যা বিষয় গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল ফেয়ারস্টেন ৫ দিনের শুনানি শেষে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
ওই আদালতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং সহ অন্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কাচিন, কারেনসহ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এ অভিযোগ আনেন।
রায়ে ১৭টি সুপারিশ করা হয়। বিচারক গিল এইচ বয়েহরিংগারের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে,
মিয়ানমার সরকারকে সেখানে মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের তদন্ত কমিটির সদস্যদের ভিসা ও মুক্তভাবে ঘটনা তদন্ত করতে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মতো যারা সহিংসতার জেরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এ ট্রাইব্যুনালের ফলাফল, রায় এবং সুপারিশগুলো মিয়ানমার সরকারকে সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য চাপ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সিভিল গোষ্ঠীগুলোকে পাঠানো হবে।
সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীরা অংশ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন জবানবন্দিতে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সর্বস্তরে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা ও কাচিন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বক্তব্য শুনেছি। তারা সবাই একবাক্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বর নিপীড়নের নানা চিত্র তুলে ধরেন। তাঁরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনেন। রোহিঙ্গারা রাখাইনে চলমান অভিযানকে জাতিগত নিপীড়ন হিসেবে তুলনা করেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা সবাই চরম ক্ষোভ দেখান। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনেন। সু চির অবস্থানের প্রতি ঘৃণা জানান।’