কমলগঞ্জে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ

53

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নে শারীরকিভাবে নির্যাতন করে স্ত্রীর মুখে মুখে বিষ ঢেলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেখে স্বামী পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরও স্ত্রীর মৃত্যু হয়। গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর কানাইদাশী গ্রামে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে গভীর রাতে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
উত্তর কানাইদাশী গ্রাম সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক আগে এ আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের রমিজ উল্যার (৫৫) ছেলে ডেকোরেটার্স কর্মী সুলতান আহমদ (সেলিম) (২৫)-এর সাথে ইসলামপুর ইউনিয়নের টিলাগাঁও-এর নুর মাহমদের (৬০) মেয়ে জান্নাতুন বেগমের (১৯) বিয়ে হয়েছিল। স্বামী সুলতান আহমদ ইসলামপুর ইউনিয়নের টিলাগাঁও-এর ইকবাল ডেকোরেটার্সে কাজ করতো বলে বিয়ের পর থেকে স্ত্রী জান্নাতুনকে নিয়ে উত্তর কানাইদাশী গ্রামে বসবাস করছিল। বিয়ের পর থেকে স্বামী  সুলতান আহমদ শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা ও আসবাবপত্র নিয়ে আসতে তাগাদা দেয়। এ নিয়ে প্রায়ই স্বামী স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহে স্বামী স্ত্রীকে মারধর করতো।
গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) গৃহবধূ জান্নাতুন বেগম বড় বোনের বাড়ি আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও  বেড়াতে যায়। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করে সোমবার বিকালে উত্তর কানাইদাশী গ্রামে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসে। বড় বোনের বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে না আসায় রাত ৯টার দিকে স্ত্রীকে মারপিট করে মুখে বিষ দিয়ে স্ত্রী বিষ পান করেছে বলে প্রচার করতে থাকে স্বামী  সুলতান আহমদ। তবে এ ঘটনাটি সুলতান তার শ্বশুর বাড়িতে না জনিয়ে সোমবার রাতে  প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ত্রীকে নিয়ে যায়। গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে রাতেই গৃহবধূকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্ত্রীকে রেখে স্বামী সুলতান পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় সোমবার গভীর রাতে গৃহবধূ জান্নাতুনের মৃত্যু হয়।
নিহত গৃহবধূর বাবা নুর মাহমদ (৬০) বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন যৌতুকের টাকা  ও আসবাবপত্র চেয়ে না পেয়েই  মেয়ের জামাই সুলতান আহমদ স্ত্রী জান্নানতুনকে শারীরিক নির্যাতন করে আহত হওয়ার পর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যার নাটক সাজায়। স্ত্রীর লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে স্বামী সুলতান তার কানের, নাকের ও গলার স্বর্ণলঙ্কারও খুলে নিয়ে গেছে। তিনি জোর দাবি করেন স্বামীর নির্যাতনেই তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটঁনায় তিনি হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান।
গৃহবধূর চাচা আলী আহমদ (৩৫) মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, এর আগেও স্বামীর শারীরিক নির্যাতনে তার ভাতিজির এক পা ভেঙ্গেছিল। ঘটনার রাত দশটায় গ্রামবাসী সূত্রে  জান্নাতুনের বিষ পানের খবর পেয়ে তার স্বামী সুলতানসহ সে বাড়ির অনেকের কাছে ফোন করলে কেউ ফোন ধরেনি। রাত সাড়ে ১২টায় একটি সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখেন মেঝেতে গৃহবধূ জান্নাতুনের মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর থানাকে অবহিত করলে মঙ্গলবার দিনে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে রাতে হাসপাতালে ফেলে স্বামী পালিয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত সুলতান আহমদকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে(০১৭৮১৫৮২৬৬৪) কল করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূর এ ধরনের মৃত্যুর কথা শুনেছেন। এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তারপরও পুলিশ তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।