৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ তারিখে জেনারেল এম এ জি, ওসমানি পি এস সি (অবসর প্রাপ্ত)কে আহবায়ক করে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সমর্থিত একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছিল। পার্টির নাম দেওয়া হয়েছিল জাতীয় জনতা পার্টি। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তিনি (ওসমানী) পালন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট থেকে ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৪৪৫৫২০০২১.৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় ও ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (স্বতন্ত্র) ২৯৩৬৩৭১.৪ চতুর্থ হন। স্বাভাবিক নির্বাচন হলে তিনি আরো অনেক বেশী ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। তৎকালে সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণের রায় প্রতিফলিত না হওয়ায় জনগণ এই মহান নেতাকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তিনি ১৬ ফেব্র“য়ারী, ১৯৮৪তে পরলোক গমন করেন। স্বৈরশাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। ওসমানী সাহেবের ব্যক্তিগত সকল ডকুমেন্ট স্বৈরশাসক এরশাদের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় হেফাজতের নামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অদ্যাবদী ঐসকল দলিলপত্রের আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ওসমানী সাহেবের মৃত্যুর পর জনতা পার্টির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেন এবং স্বৈরাচার এরশাদের পতন হলে (দীর্ঘ দিন যাবৎ জনতা পার্টি ক্ষমতার বাইরে থাকায়) পার্টির বেশ কিছু সদস্য পরপর ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক দল দুইটি থেকে (ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগের লোভে) নিরবতা পালন করেন, যে কারণে জনতা পার্টি আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। কিন্তু না, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বাংলার বীর সেনাপতি, জনপ্রিয় নেতা, ফিল্ড মার্শাল আতাউল গণি ওসমানীকে দেশপ্রেমিক বাঙালি জাতি এখনও ভুলে নাই। গত ১৩ অক্টোবর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ নতুন আঙ্গিকে ওসমানীর রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত জনগণের মধ্যে থেকে কিছু সংখ্যক দেশপ্রেমিক নাগরিক দেশব্যাপী জাতীয় কমিটি গঠন করে পার্টির কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে পার্টির নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ জনতা পার্টি বিজেপি (ওসমানী)। শ্রদ্ধেয় সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান সাহেবকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসাবে রাখার প্রস্তাবে ও এডভোকেট গোলাম কিবরিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। দুর্নীতিমুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে এ পর্যন্ত দেশের অর্ধেকেরও বেশী জেলায় পার্টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক পার্টি হিসেবে নিবন্ধন প্রাপ্তির দ্বার প্রান্তে বিজেপি কোন রাজনৈতিক জোটের শরীক না হয়ে এককভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৯৭৬ সালে ওসমানী সাহেব যে ’গণনীতির রূপরেখা’ ঘোষণা করেছিলেন তা নিম্নরূপ হুবহু তোলে ধরা হলঃ- পার্টির উদ্দেশ্য ও বিশেষ লক্ষ্য অর্জনে নিম্নোক্ত ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচীর ভিক্তিতে গঠিত হয়েছিল-
ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচীর ঘোষণা
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতির প্রতি বিশ্বাস ধারণ করে, প্রজাতন্ত্র এবং এর সংবিধানের প্রতি অনুগত্য পোষণ করে, প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মান সম্মানের প্রতি হুমকি এবং পরিকল্পিত, সুসমম্বিত এবং একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ভিত্তিতে এই হুমকির মোকাবিলার জন্য নাগরিক সাধারণকে সংগঠিত কারার জরুরী প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন থেকে এতদ্বারা আমরা জাতীয় জনতা পার্টির গঠন ঘোষণা করছি এবং অতঃপর বর্ণিত কর্মসূচীর ভিত্তিতে আমরা নিজেদেরকে জাতির সেবায় উৎসর্গ করছি।
আমরা যাতে বিশ্বস্ততার সাথে জাতির সেবা করতে পারি সে জন্য আমাদেরকে পথ প্রদর্শন এবং উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও শক্তি প্রদানের জন্য আমরা সর্বশক্তিমানের নিকট প্রার্থনা করছি এবং জাতির সেবার মহান প্রচেষ্টায় আমাদের সাথী হওয়ার ও আমাদেরকে সমর্থন দানের জন্য আমরা জনসাধারণের নিকট আবেদন করছি। জনসাধারণের সহযোগিতায় নিম্নলিখিত লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হওয়ার জন্য আমরা জাতিকে প্রতিশ্র“তি দান করছি ঃ-
উদ্দেশ্য ও বিশেষ লক্ষ্য
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এবং এর সংবিধান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা, নির্যাতন ও শোষণমুক্ত এবং সাম্যভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে এর জনগণের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক প্রগতি ও মর্যাদা রক্ষা করা ।-“গঠনতন্ত্র অনুচ্ছেদ-২
কর্মসূচী
মূলনীতি
২। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক সমতার ভিত্তিতে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম, শোষণ থেকে মুক্তি এবং সামাজিক স্বার্থ সংরক্ষণ সাপেক্ষে (অর্থাৎ সমাজের স্বার্থকে ঊর্ধ্বে) রেখে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান।
প্রশাসনের সর্বস্তরে জনসাধারণের অংশ গ্রহণ
৩। যথাযথভাবে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি এবং পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সমম্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে সরকার গঠন ছাড়াও আমাদের লক্ষ্য হবে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত প্রশাসনের সর্বস্তরে জনসাধারণের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা। অব্যাহত কর্মদক্ষতার নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে কার্যকরী করা হবে এবং এক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে জেলা পর্যায় অবধি উন্নয়নমূলক কার্যে গণপ্রতিনিধিগণকে সংশ্লিষ্ট করা হবে এবং উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা কার্যকরী করণে এবং স্থায়ী সরকারী কর্মচারীদের মাধ্যমে জেলা পর্যায় অবধি প্রশাসন কার্য পরিচালনায় সমর্থ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গণপ্রতিনিধিদের ‘কেডার’ গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পার্লামেন্টের আসন এবং নির্বাচনী এলাকার পুনর্বিন্যাস
৪। জাতীয় সংসদের সদস্যরা যাতে জনসাধারণের সেবায় আত্ম-নিয়োগ করতে পারেন এবং কোন রকম আর্থিক অনটনে না থাকেন সে জন্য তাঁদেরকে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিতে হবে বিধায় অর্থভান্ডার থেকে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয়িত হবে। এক্ষেত্রে মিতব্যায়িতার উদ্দেশ্যে এবং সর্বোপরি সর্বভৌম জাতীয় সংস্থ্-াপার্লামেন্টে-সর্বোত্তম প্রতিভা এবং কেবলমাত্র প্রকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরই সমাবেশ ঘটাবার উদ্দেশ্য আসন সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণের কমাতে হবে, যাতে তা কোন ক্রমেই দুই শতের বেশী না হয়।
কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প মহল এবং বুদ্ধিজীবীদেরকে এক কথায় সকল শ্রেণীর জাতীয় স্বার্থকে অধিকতর যুক্তিসঙ্গত প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দানের জন্য পার্লামেন্টের আসন পেশা বা বৃত্তি-ভিত্তিক নির্বাচনী এলাকার মাধ্যমে বন্টন করা হবে এবং সেই সাথে নিম্নলিখিত ধরনের ওয়েটজ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। তবে প্রশাসনিক এলাকার ভিত্তিতেই নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ করা হবেঃ-
(ক) বৃত্তি-ভিত্তিক বা পেশা-ভিত্তিক নির্বাচনী এলাকা (ওয়েটেজ, সহ)-কৃষিজীবী/গ্রামীণ শ্রমিক (দক্ষ এবং অদক্ষ-মৎস্যজীবী সহ)। পল্লী অঞ্চলের অন্যান্য কর্মজীবী।
শিল্প এবং শহরাঞ্চলের শ্রমিক (দক্ষ ও অদক্ষ।
বাণিজ্য।
বেসরকারী খাতের শিল্প।
বিশ্ববিদ্যালয় সমূহঃ ভোটদানের এবং নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত হবেন গ্রাজুয়েট বৃন্দ।
শিক্ষক, যাঁরা গ্রাজুয়েট নন।
চিকিৎসক
উপরোক্ত কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত নন শহরাঞ্চলের এমন অবশিষ্ট কর্মজীবী।
(খ) সংরক্ষিত আসন কোন নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ ভোটে (কেবল মাত্র নির্বাচিত মহিলা সদস্য ছাড়াও অপ্রত্যক্ষ পাঁচ বৎসরের ভোটের নির্বাচিত কিছু সংখ্যক মহিলা সদস্যের জন্য) থাকবেন। বৃত্তি-ভিত্তিক বা পেশা-ভিত্তিক এলাকার সদস্যরা এমপি হিসাবে শপথ গ্রহণের পর এদেরকে নির্বাচন করবেন।
সর্বমোট অনধিক ২০০ আসন।
আরেক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে আমরা উপরোল্লিখ নীতির ভিত্তিতে সংশোধন করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো।
ধর্ম
৫। স্ব-স্ব ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের, তা প্রচারের এবং পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা সকল নাগরিকের থাকবে এবং কোন ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থি কোন আইন বাংলাদেশে প্রণয়ন বা প্রয়োগ করা হবে না। কোন নাগরিককেই তার স্ব ধর্ম বাদে অন্য কোন ধর্মীয় নির্দেশ পালন করতে হবে না বা তাকে অন্য কোন ধর্মের উপসনা বা উৎসবে অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে না কিংবা অন্য কোন ধর্ম প্রচার বা প্রসারের জন্য তাকে কোন কর দিতে হবে না।
মাদ্রাসা এবং সংস্কৃত কলেজ প্রভৃতির মত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণ এবং এই সব প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত শিক্ষাকে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের সমাজের পক্ষে কল্যাণকর করে তোলার উদ্দেশ্যে এই সব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সাহায্য দান করা হবে।
বিচার বিভাগ
৬। বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং নৈতিক ও মানসিক উৎকর্ষের অধিকারী ব্যক্তিবর্গকে বিচার বিভাগের সদস্যরূপে নিয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জীবনের মৌলিক প্রয়োজন।
৭। প্রত্যেক নাগরিককে জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণ বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিকে কর্ম সংস্থানের সুযোগ প্রদানের জন্য প্রাপ্তব্য সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলনীতি
৮। শোষণ এবং অভাব থেকে মুক্ত সমাজ গঠন এবং ন্যায় সংগতভাবে সম্পদের যথাসম্ভব সমবন্টনের উদ্দেশ্যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিম্নলিখিত মূলনীতি সমূহ করা হবেঃ-
(ক) অপব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করা, কাজের পুনরাবৃত্তি (অর্থাৎ একই কাজে জন্য অনেকগুলি কর্তৃত্ব সৃষ্টি) প্রতিরোধ এবং সর্বাধিক প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতা অর্জন কল্পে বেসামরিক এবং প্রতিরক্ষার সকল ক্ষেত্রে ব্যয়ের প্রশ্নে চূড়ান্ত মিতব্যায়িতা অবলম্বন। (অসমাপ্ত)