স্টাফ রিপোর্টার :
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নগরীর পাড়া-মহল্লা ও সড়কে বসানো হচ্ছে পশুর অবৈধ হাট। আর এসব হাট বসানোর নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কিছু নেতা। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিএনপিসহ অন্য দলের নেতারাও।
গত রবিবার পর্যন্ত নগরীর অন্তত ১৫টি স্থানে পশুর অবৈধ হাট বসে গেছে। এক্ষেত্রে বাদ পড়ছে না পাড়ার গলি কিংবা খেলার মাঠও। যত্রতত্র স্থাপিত এসব পশুর অবৈধ হাটের কারণে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়বে এসব হাটের সংখ্যাও। তবে, পশুর এসব অবৈধ হাট উচ্ছেদে প্রশাসন কিংবা নগর কর্র্তৃৃপক্ষের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
মহানগরের একমাত্র বৈধ পশুর হাট ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার পশুর হাট। কাজিরবাজার ছাড়াও মহানগর পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ১০টি বৈধ পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- লাক্কাতুরা চা বাগান বাজার সংলগ্ন মাঠ, লালাবাজার পশুর হাট, কামাল বাজার পশুর হাট, নাজির বাজার পশুর হাট, হাজীগঞ্জ বাজার পশুর হাট, জালালপুর বাজার পশুর হাট, রাখালগঞ্জ বাজার পশুর হাট, পীরের বাজার পশুর হাট ও খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠের পশুর হাট। এছাড়া, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চারটি স্থানে অস্থায়ী হাটের ইজারার দরপত্র দেয়া হলেও ঝালোপাড়া মসজিদের খালি জায়গাটিতে শুধু একটি হাট দেয়া হয়। বাকি সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও কাকলি সিনেমা হলের সামনের মাঠ হাটের ইজারা দরপত্রই জমা হয়নি। তবে এসবের বাইরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই একাধিক অবৈধ হাট বসিয়েছে প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে সদর উপজেলার টিবি গেইট এলাকায় নির্মাণাধীন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অবৈধ হাট বসিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। তবে সেখানে কৌশলগত কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে বৃহত্তর শাহী ঈদগাহ এলাকাবাসীর নাম। যদিও এই স্থানে পশুর হাট বসানোর বিপক্ষে স্থানীয়রা।
এছাড়া শাহী ঈদগাহ লাল মাটির টিলা এলাকায় গলিতে পশুর হাট বসিয়েছেন প্রবাসী বিএনপি নেতা মঞ্জু জামান চৌধুরী। একই ভাবে টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত ফলকের সামনের মাঠে পশুর হাট বসিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে যানজটসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হবে যাত্রী সাধারণকে।
তাছাড়া, নগরীর রিকাবীবাজার পয়েন্ট, উপশহর, আখালিয়া, কুমারপাড়া, পাঠানটুলা, ঘাসিটুলা, দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা। একই ভাবে সিলেট-তামাবিল সড়কের সুরমা গেইট, সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজারেও অবৈধ হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে, এসব অবৈধ হাটের কারণে বৈধ হাটের ইজারাদাররা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে শঙ্কায় রয়েছেন। তাদের মতে, প্রতিবার অবৈধ হাটের লোকেরা পেশীশক্তির বলে বৈধ হাটে আসা পশুর ট্রাক আটকে নিজেদের হাটে নিয়ে যান, এতে করে তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পশুর অবৈধ হাটের পক্ষের লোকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে সিলেটের প্রবেশদ্বারের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে আসা পশুবাহী ট্রাক অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের হাটে নিয়ে যান। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেপারী যেমন তাদের চাহিদা মোতাবেক পশু হাটে যেতে পারেন না তেমন ক্ষতিগ্রস্তও হন তারা। শুধু তাই নয়, অনেক সময় একাধিক হাটের লোকদের মধ্যে ট্রাক ছিনিয়ে নেয়া নিয়ে হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা জানান, সড়ক থেকে পশুবাহী ট্রাক ছিনিয়ে নেওয়া বন্ধে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। এক্ষেত্রে একটি টইল দল নগরীতে মোতায়েন রয়েছে। তাছাড়া পশুবাহী ট্রাক পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ পাহারায় সংশ্লিষ্ট হাটে পৌঁছানো হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, এ বছর সড়কে পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। তাছাড়া পশুর অবৈধ হাট উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন সহায়তা চাইলে পুলিশ তাদের সহায়তা দেবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া জনগণকে পশু কেনার ক্ষেত্রে অবৈধ হাট পরিহার করারও পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।