বন্যার অজুহাতে বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্য, ভোজ্য তেল ও মসলার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অজুহাত একটাই, বন্যা; যদিও বন্যার কারণে সরবরাহে কোনো টান পড়েনি। পরিবহন খরচ সামান্য বাড়লেও বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। বরং পরিবহন খরচের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ বলে ধরা হচ্ছে।
বাজারে মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতা শুরু হয় চালের মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে। হাওরে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ফসল উঠতে পারেনি। সরকার দ্রুত চাল আমদানির ব্যবস্থা নিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। ওদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ে ভারতীয় যে চালের দাম ছিল ৩৬৭ ডলার, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০৪ ডলারে।
থাইল্যান্ডের যে চাল গত বছর টনপ্রতি ৩৯৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪৭ ডলারে। সরকার চালের আমদানি শুল্ক সর্বনিম্ন নির্ধারণ করার পরও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে এখানে দাম স্থির থাকছে না। অবশ্য এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই এমন কথাও বলা যাবে না। ঘূর্ণিঝড় মোরা, পাহাড়ধস ও হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বর্ধিত হারে ত্রাণ বিতরণ এবং বোরো ফসল থেকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় চাল সংগ্রহ করতে না পারার জন্য মজুদ হ্রাস পায়। অনিবার্যভাবেই বাজারে তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে কাঁচা পণ্যের বাজারেও অব্যাহতভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। উৎপাদন ব্যাহত হলে বা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেলে সংকট দেখা দেবে। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি এখন থেকেই ভেবে দেখতে হবে। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।