বিয়ানীবাজারে প্রথমবারের মতো ভাসমান বীজতলায় রোপা-আমন’র বীজ বপন

16

বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিয়ানীবাজারে ভাসমান বীজতলায় প্রান্তিক চাষিদের ফিকে হওয়া স্বপ্ন জ্বলে উঠেছে। তিন দফা বন্যায় বোরো, আউশ ধান হারিয়ে হতাশ কৃষকদের নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে ভাসমান বীজতলা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস জানান, বিয়ানীবাজারে প্রথমবারের মতো ভাসমান বীজতলায় কৃষকরা রোপা-আমনের বীজ বপন শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত উপজেলা পনেরটি ভাসমান বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। তাঁর আশা কয়েকদিনের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশিরবন্দ এলাকার বিলাল আহমদ বলেন, মৌসুমের প্রথম বন্যায় রোবো গেছে। এরপর আউশ আবাদ করেও বন্যার কারণে রক্ষা করতে পারিনী। এখন আমন আবাদ করবো কিন্তু একটু টুকরো জমিও অক্ষত নেই। চারদিক পানি আর পানি। চারার জন্য সব জায়গায় হন্য হয়ে ঘুরছি কিন্তু চারা পাইনি। বীজতলা না থাকায় হতাশ পড়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা আমাদের বিকল্প পথ বাতলে দিলেন। এখন ভাসমান বীজতলায় আমন ধান আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ ছাড়া উপজেলার আলীনগর, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার ও মাথিউরা ইউনিয়নের পনেরজন কৃষক ভাসমান বীজতলা তৈরী করে চারা উৎপাদন শুরু করেছেন। প্রথমবারের মতো ভাসমান বীজতলা তৈরী করে উৎফুল্ল আলীনগর ইউনিয়নের পূর্ব খলাগ্রামের এবাদুর রহমান। তিনি বলেন, আমন ধান আবাদ করতে পারবো- এটা চিন্তা করিনি। বীজতলায় এখনো পানি। শেষ পর্যন্ত ভাসমান বীজতলা ফর্মূলা নিয়ে আসেন কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস। তার কথামতো বীজ তলা তৈরী করে বীজ বপনের কয়েকদিনের মধ্যে চারা গজিয়েছে। এখন আমন ধান আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। তিনি বলেন, তার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই ভাসমান বীজতলা তৈরী করা শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষিক অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩০ ফুট দৈর্ঘ ও ৪ফুট প্রস্থ একেকটি ভাসমান বীজতলা (বেড) তৈরী করতে কৃষকদের হাজার খানেক টাকা খরচ পড়ে। তবে যেসব কৃষক নিজেরা শ্রম দিয়ে বীজতলা তৈরী করছেন তাদের খরচ অর্ধেক কমে যাবে। একেকটি ভাসমান বীজতলা তৈরী করতে বাঁশ, কুচুরিপনা এবং ৩ ইঞ্চি পরিমান মাটির প্রয়োজন। এ রকম একটি বীজতলায় তিন মৌসুম পর্যন্ত স্থায়ীত্ব থাকে। তিনটি বেডের উৎপন্ন চারা দিয়ে অনায়াসে এক বিঘা জমি আবাদ করা সম্ভব। একটি বেডে কেজি পরিমান বীজ লাগে। এসব বীজতলার জন্য আলাদা সারের প্রয়োজন নেই। কুচুরিপনা পঁচে আপনা থেকে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ভাসমান বীজতলা এ অঞ্চলে এটিই প্রথম। কৃষকদের কাছে এ ধারণা নতুন হওয়ায় তারা প্রথমে অনিহা প্রকাশ করে। কিন্তু বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের পরামর্শ নিয়ে তারা বীজতলা তৈরী শুরু করেন। তিনি বলেন, এসব ভাসমান বীজতলায় পরবর্তী সময়ে শাক-সবজি আবাদ করা সম্ভব। অনুকুল পরিবেশ থাকলে একটি ভাসমান বীজতলা দিয়ে তিন মৌসুম পর্যন্ত বীজ উৎপাদন করা যাবে।
তিনি আরোও জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রতি বেডের জন্য এক কেজি পরিমান বীজ দেয়া হয়েছে।