হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বাহুবলে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারকে জয় করে উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন দরিদ্র পপি আক্তারের চোখে-মুখে। রোববার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সে জিপিএ ৩.৭৫ পেয়েছে। ক্যামু থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালে উপজেলার মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে অদম্য মেধাবী পপি আক্তার এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে হবিগঞ্জ-সিলেটের মহিলা সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এলাকার লোকজনের আর্থিক সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছে। উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের কন্যা মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মেধাবী ছাত্রী পপি আক্তার জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.২০ ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময় থেকেই দূরন্ত এ মেধাবী ছাত্রীটির জরায়ূতে নানা জটিল রোগ দেখা দেয়। চলতে থাকে চিকিৎসা। দীর্ঘ এ চিকিৎসা চলাতে গিয়ে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। মেয়েটির বড় ভাই শাহীন মিয়া ট্রাক চালক ও সাজু মিয়া হেলপার হিসেবে কাজ করেন। পপি আক্তার ছাড়াও বোন হেপি আক্তার ৯ম শ্রেণী ও ভাই সৌরভ মিয়া ১ম শ্রেণীতে লেখা পড়া করে। দু’ভাইয়ের আয়ে অপর তিন ভাই-বোনের শিক্ষা ও পারিবারিক খরচই চলে কোন রকমে। তার উপর পপি আক্তার-এর চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে পরিবারটি দেনার জালে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তার জরায়ূ ক্যান্সার হয়েছে জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন তার চিকিৎসক। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারেনি তার পরিবার। এ অবস্থায় স্থানীয় সচেতন লোকজন তার চিকিৎসার্থে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি দৈনিক মানবজমিন সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এ সূত্রে কেয়া চৌধুরী এমপি’র সহায়তায় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পপি আক্তার ভর্তি হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি থাকার পর তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে সে ১৫ জানুয়ারি বাড়ি ফিরে। এরপর থেকে ক্যামু থেরাপি’র মাধ্যমে চলতে থাকে তার চিকিৎসা। এ অবস্থায়ই অদম্য পপি আক্তার গত ১লা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় বসে। ক্যান্সার আক্রান্ত পপি আক্তার বলেন, আমি বেঁচে থাকার স্বপ্নটাই যেখানে ভুলতে বসেছিলাম, সেখানে আজ বেঁচে থাকা ও উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন এক সাথে আমাকে ধরা দিয়েছে। এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে আল্লাহ তায়ালার অপার করুনায় এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, এলাকার দানশীল মানুষ, সাংবাদিক ও এমপি কেয়া চৌধুরীর সহযোগিতায়। আমি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। এক প্রশ্নের জবাবে পপি আক্তার জানান, ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসেবে এ পর্যন্ত তাকে ৬টি ক্যামু থেরাপি দেয়া হয়েছে। আগামী ২৯ জুলাই ৭ম থেরাপির ২য় পর্ব প্রদান করা হবে। আরো ২টি থেরাপি শেষ চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।