৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনাল এখন নামেই

53

সাইফুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল থেকে :
মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনাল এখন নামেই আছে। বাস-মিনিবাস টার্মিনালে আসা-যাওয়া না করায় এটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত। মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়য়ে নির্মিত এই টার্মিনাল ২০১০ সালে চালু করা হয়েছিল।
টার্মিনালে দেখা গেছে একটি যানবাহনও নেই। যানবাহন ও মানুষশূন্য টার্মিনালটিতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। টার্মিনাল ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। পুরো ভবনজুড়ে নোংরা অবস্থা। ভবনের মেঝে গোবর ও বিভিন্ন রকম আবর্জনা ছড়ানো। মেঝের টাইলস ভেঙে গেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কক্ষের কাচের দরজা খোলা। কক্ষের ভেতরটা ময়লায় কদাকার। যানবাহন না আসার কারণে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার নামে বরাদ্দ করা কাউন্টার বন্ধ।
টার্মিনালের প্রবেশমুখের একটি চা-স্টলের মালিক হেলাল আহমদ জানান, শুধু হবিগঞ্জ-সিলেট রুটের বাস রাস্তার মধ্যে একটু সময় থামে। টার্মিনালের ভেতরে ঢোকে না। আর কোনো বাস থামে না। রাতে তাজ পরিবহন ও কুমিল্লার দু-চারটি বাস এখানে রাখা হয়। ভোরে আবার চলে যায়। একজন নৈশপ্রহরী আছে। আর কেউ নেই। শুধু রাতের বেলা টার্মিনালের লাইট জ্বালানো হয়।
পৌরসভা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য শহর এলাকার সড়ক থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছিল।
মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পৌরসভার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে যুগিডহর এলাকায় টার্মিনালের অবস্থান। প্রায় তিন একর জায়গার মধ্যে নগর পরিচালনা ও উন্নীতকরণ অবকাঠামো প্রকল্প ও পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এতে জমি কেনা, ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে খরচ হয় ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৯ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বাস টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরিবহন মালিকদের অনীহাসহ নানা কারণে বাস টার্মিনাল তখন চালু করা যায়নি।
পরে জেলা প্রশাসন পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাস টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। চালুর পর ঢাকা-মৌলভীবাজার, সিলেট-হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আন্তজেলার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল করে। বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে চলাচলকারী কিছু অটোরিকশাও টার্মিনাল থেকে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই বাসগুলো টার্মিনাল থেকে সরে অবৈধ স্ট্যান্ডে চলে গেলে টার্মিনাল পুরোনো নীরবতায় ডুবে যায়। এত দিনেও আর টার্মিনালের সরবতা ফিরিয়ে আনা যায়নি।
মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা মো. আবদুর রশীদ জানান, টার্মিনাল এমন এক এলাকায় পড়েছে যেখানে দূরপাল্লার কোনো গাড়ী যায় না। চালকেরা যেতে চান না। ব্যবসায়ীরাও সেখানে গাড়ী দিতে চান না। তিনি জানান, এই টার্মিনালে নেমে শহরে যেতে আরও ২০-৩০ টাকা লাগে। কলেজে যেতে লাগে ৪০ টাকা। দরিদ্র ছাত্রছাত্রীর পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব না।
পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, ‘শহরের কুসুমবাগ এলাকায় ট্রাফিক যদি গাড়ী দাঁড় করাতে না দেয় তাহলে শহরে যানজট হতো না। গাড়ীগুলো টার্মিনালে চলে যেত। ট্রাফিক কেন যে সক্রিয় হচ্ছে না, তা বুঝি না।’
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘টার্মিনালটি অকার্যকর হয়ে আছে। এটি দেখে পৌরসভা। টার্মিনাল চালু নিয়ে অনেক মিটিং করেছি। কিছু বাসকে টার্মিনালে যেতে বাধ্য করেছিলাম। পরে একটি কমিটি করে দিয়ে ছিলাম। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে এটি কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।