সিলেট- আখাউড়া রেললাইনে ক্লীপ চুরির হিড়িক ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন

59

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার। এই রেললাইনে ঝুঁকি নিয়ে ও স্বাভাবিক গতির চেয়ে কম গতিতে চলাচল করে ট্রেন। কারণ রেললাইনের বেশিরভাগ ক্লীপ চুরি হয়ে গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে রহস্যময় কারণে উদাসীন।
সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ৫টি সেকশনে ভাগ করা। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ছাতকবাজার সিলেট সেকশন। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত কুলাউড়া সেকশন। কুলাউড়া থেকে লস্করপুর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল সেকশন। লস্করপুর থেকে মুকুন্দপুর পর্যন্ত সায়েস্তাগঞ্জ সেকশন এবং মুকুন্দপুর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত আখাউড়া সেকশন। এই ৫ সেকশনের ১৭৮ কিলোমিটার রেলপথকে নির্বিঘœ করতে রয়েছেন রয়েছেন ৫ জন ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ)। কিন্তু এরা কতটা নির্বিঘœ করতে পারছেন রেলপথকে ?-এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের।
সরেজমিন কুলাউড়া থেকে লংলা, লংলা থেকে টিলাগাঁও এবং টিলাগাঁও থেকে মনু ষ্টেশনে গেলেও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদাসীনতার নজির চোখে পড়বে। শতকরা ৫০ ভাগ রেলের ক্লীপ নেই। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। শুধু ঝুঁকি নিয়ে নয় স্বাভাবিক গতির চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চলাচল করে থাকে। কেননা গতি বাড়ালেই ট্রেনের বগি লাফায় এবং বাড়াবাড়ি করে। এর অন্যতম কারণ রেলের ক্লীপ না থাকা। ট্রেন চালকরা দুর্ঘটনা এড়াতে মূলত কম গতিতে ট্রেন চালান। ফলে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো প্রায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক-দুই ঘন্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছে থাকে। তাছ্ড়াা ক্লীপ ও ফিস প্লেইট চুরির কারণে ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গত কয়েক বছর থেকে এই বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের ক্লীপ চুরির অন্যতম কারণ হচ্ছে লোকবল সংকটের কারণে ষ্টেশন বন্ধ হওয়া। কুলাউড়ার ভাটেরা, লংলা ও টিলাগাঁও ষ্টেশন বন্ধ। নামকাওয়াস্তে চলছে ছকাপন ও মনু ষ্টেশন। যদি একটা উপজেলার মধ্যে ৫টি ষ্টেশন বন্ধ থাকে তবে এর মধ্যবর্তী রেলপথ অনেকটাই অরক্ষিত থাকে। ষ্টেশন চালু থাকলে সেসব ষ্টেশনে কর্মরতরাও বিষয়টি তদারকি করে। তাদের মতে এখনতো রেলের ক্লীপ নিচ্ছে। আরও কিছুদিন পর বন্ধ ষ্টেশনের মালামালও নিয়ে যাবে চোরচক্র।
স্থানীয় লোকজনের মতে রাতের আধারে চোরচক্র এই ক্লীপ খুলে নেয়। দিনে নিলে মানুষের নজরে পড়তো। এসব ক্লীপ ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করা হয়। ভাঙাড়ি মালামালের সাথে ট্রাক বোঝাই করে যা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাচার হয়। ভাঙাড়ি মাল বোঝাই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চলালে রেলের ক্লীপ, ফিস প্লেট, পাত পাওয়া যাবে। অতীতে অনেকবার ধরাও পড়েছে। মামলা হয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে এসে ফের ব্যবসা চালিয়ে যায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা। মূলত এরাই চোরচক্রের মূলহোতা। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে রেলপথ অনেকাংশেই নিরাপদ হবে।
ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান জানান, চুরি হয়েছে মূলত বিভিন্ন সময়ে। ইতোমধ্যে একটি চাহিদা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া আছে। তাছাড়া মেরামতও করা হচ্ছে সময় সময়।