প্রয়োজনে গ্রেফতার হবেন মাঠ পর্যায়ের নেতারাও

44

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বরং এরই মধ্যে চাপে  ফেলা বিএনপিকে মোকাবেলায় আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
খালেদা জিয়া আন্দোলন থেকে সরে না আসলে রাজধানী বা আশপাশে কোনো সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতা। এর অংশ হিসেবেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত জোটকে কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই নেতারা।
বিএনপির ৫ জানুয়ারির কর্মসূচির দুদিন আগেই গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় খালেদা জিয়াকে। চারদিন পর গত বৃহস্পতিবার কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়া হলেও কয়েক ঘণ্টা পর আবার লাগানো হয় সে তালা। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। খালেদা জিয়ার কাছে বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের কাউকে কাউকে যেতে দেওয়া হলেও কোনো নেতা-কর্মীকেই ঘেঁষতে দিচ্ছে না পুলিশ।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, গত বছর আন্দোলনের সময় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাগুলো দ্রুত বিচার শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে নাশকতা হলে নেতাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হবে নতুন করে মামলাও।
জানুয়ারির শুরু থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সংগঠন মাঠে সক্রিয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা একজোট হলেই হামলার ঘটনা ঘটছে।
এর পাশাপাশি ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এর অংশ হিসেবেই ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেওয়া হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। এর আগে বহুবার খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হলে সময় দিয়েছেন বিচারক। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া এবং একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান সাজা পেলে বিএনপি নেতারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপিকে চাপে ফেলতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলটির মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও গ্রেফতার করা হবে। এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্যরা।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি ঘিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ঘোষণা এবং নাশকতা নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা প্রকাশ করার পর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সাড়ে তিন হাজার নামের তালিকা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তারাই বিপদে পড়বে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলো ভেঙে নতুন করে কমিটি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোকেও জেলা পর্যায়ে সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের আন্দোলনে যেসব এলাকায় বিএনপি-জামায়াত বেশি সক্রিয় ছিল, সেসব জেলায় সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
১১ জানুয়ারির পর থেকে ঢাকা মহানগরসহ বিভাগীয় শহর ও বড় জেলাগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানোর চিন্তা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, কোনোভাবেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য সহিংসতা প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে দলের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই সংগঠিত নয়, তারা আবার কিসের আন্দোলন করবে। এবার তো খালেদায় (খালেদা জিয়া) মনে করছেন, আগে তো এক মির্জায় পারেন নাই। এবার তো আরেক মির্জায় (মির্জা আব্বাস) আছে! সেই আশায় তিনি সরকার পতনের দিবাস্বপ্ন দেখছেন। উনি তো জানেন না, ৫ জানুয়ারির পর সরকার সাংবিধানিকভাবে কত শক্তিশালী।’ এই নেতা বলেন, ‘সহিংসতা মোকাবেলায় আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার।’
আওয়ামী লীগ মনে করে, আন্দোলন করে সরকার পতনের ক্ষমতা বিএনপির নেই। এ কারণে বিএনপি এখন চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করছে। তবে এভাবে বিএনপি জনসম্পৃক্ত আন্দোলন করতে পারবে বলে মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করছে। আমরা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই, চোরাগোপ্তা হামলা করে আপনারা বাঁচতে পারবেন না। আপনাদের সব সহিংসতার বিচার করবে সরকার।’