গোয়াইনঘাটে যত্রতত্র ক্রাশার মেশিন স্থাপন ॥ অতিরিক্ত শব্দ দূষণ, পাঠদান ব্যাহত ॥ বাড়ছে নানা রোগ বালাই

61

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার পাথুরে রাজ্য হিসেবে খ্যাত জাফলংয়ে যত্রতত্র পাথর ভাংগার ক্রাশার মেশিন স্থাপন করে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই স্কুল, ঘনবসতি, রাস্তা ঘাট ও হাট বাজারের কাছে ঘড়ে উঠেছে কয়েক শতাধিক ক্রাশার মেশিন। সরজমিন পরিদর্শন কালে দেখা যায় উপজেলার গুচ্ছ গ্রাম, মোহাম্মদপুর, মামার বাজার, বল্লাঘাট, তামাবিল, রসুল পুর, নলজুরি, সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকা, সোনাটিলা সহ আশপাশ এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই স্কুল, ঘনবসতি, রাস্তা ঘাট, হাট বাজার ও পিকনিক সেন্টার, নদীরপার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েক শতাধিক ষ্টোন ক্রাশার মেশিন। যার কারণে এসব এলাকার স্কুল কলেজ পরুয়া ছাত্র/ছাত্রী, জনসাধারণসহ মানবেতর জীবন যাপন করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আর এসব এলাকা গুলোতে ষ্টোন ক্রাশার গড়ে উঠায় অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে আশ-পাশের স্কুল গুলোতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ির পাশে ক্রাশার মেশিন গড়ে উঠায় ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা পড়াসহ সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে। এদিকে ক্রাশার মেশিনের পরিত্যক্ত ডাষ্টের কারণে ক্রাশার মেশিন সংলগ্ন এলাকার বাড়িঘরে প্রতিদিনই ডাষ্টের পরিমাণ কয়েক ইঞ্চিতে পরিণত হয়। যার কারণে তাদের বাড়ির আসবাবপত্র ক্ষতিসহ বাড়ির লোকদের লেগেই থাকে নানা প্রকার রোগ বালাই। এছাড়া অতিরিক্ত শব্দে দূষণ ও ডাষ্টের স্বীকার হয়, উল্লেখ্য এলাকার প্রায় ৭০% মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা করছে স্থানীয় সচেতন মহল।
চিকিৎসকদের অভিমতে অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে মাথা ব্যথা, চোখে পানি পড়া, বদ মেজাজী, কানে কম শোনা এবং পাথর ভাঙ্গার ডাস্ট বা ধূলোবালি নাক মুখ দিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে প্রথমে শাস কষ্ট, কাশি, এলার্জি, সিলোকোসি এবং পাকস্থলী ক্যান্সারসহ প্রভৃতি রোগে আত্র“ান্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধ আইন থাকলেও কার্যকারিতা না থাকায় এসব এলাকা গুলোতে অবাধে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো হচ্ছে পাথর ভাঙ্গার ষ্টোন ক্রাশার মেশিন। সঠিক কোন নিয়ম নীতি না মেনেই দিন-রাতে চালাচ্ছে এসব ক্রাশার মেশিন। অধিক শব্দ থাকার কারণে ছাত্র ছাত্রীদের লেখা পড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
এলাকাতে  ধূলোবালির উৎস হিসেবে সরজমিন জাফলং এলাকা পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, তামাবিল শুল্ক ষ্টোশনের আশপাশ এলাকায় মহাসড়কের পাশে অপরিকল্পিত ভাবে ডাম্পিং স্থাপন করে ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে আমদানীকৃত পাথর রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন ক্রাশার মিলে পাথরগুলো সরবরাহ করা হয়। এতে করে পাথর লোড-আনলোড করার সময় পাথরের গুঁড়া বা ডাস্ট এর সৃষ্টি হয়। আবার এলাকায় মহাসড়কের দুইপাশে স্থাপিত ছোট বড় ক্রাশার মেশিন গুলো থেকে পাথর ভাঙ্গার সময় ডাস্ট উড়ে এসে রাস্তা ও আশপাশের বাড়িঘরে পড়ছে। পুরো এলাকাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। ধূলাবালি সৃষ্টি রোধে ক্রাশার মেশিন গুলোতে পাথর ভাঙ্গার সময় পানি ব্যবহার করার কথা থাকলেও এ নিয়ম মানছেন া কোন ক্রাশার মেশিন মালিকরা। এদিকে প্রকৃতির এ রূপ দেখতে সব সময়ই জাফলং আসেন সৌন্দর্য্য প্রেমীরা। তাই এসব নৈস্বর্গিক সোন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। সরকার এখান থেকে প্রতিবছর পাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। কিন্তু এরপরও এই অপার সৌন্দর্য্যরে এলাকাতে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ ও ডাষ্টের কারণে বেহাল অবস্থায় পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার দৃষ্টি গোচর না করায় পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে রাষ্ট্রের অনুদার ও আন্তরিক মনোভাবের পরিচয় বহন করে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা সাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সালেহ আহমদ জানান, অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে মাথা ব্যথা, চোখে পানি পড়া, বদ মেজাজী, কানে কম শোনা এবং পাথর ভাঙ্গার ডাস্ট বা ধূলোবালি নাক মুখ দিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে প্রথমে শাসকষ্ট, কাশি, এলার্জি, সিলোকোসি এবং পাকস্থলীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে ক্রাশার মেশিনগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়জনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই অপরিকল্পিত ভাগে ঘড়ে উঠা ক্রাশার মেশিন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।