বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে

3

 

দেশের চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবার ওপর মানুষের আস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। চিকিৎসার মান এবং ব্যয়ের আধিক্য নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী রোগীদের পেছনে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে থাকে।
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণা সূত্রেও জানা যায়, দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর আস্থার অভাবে এই ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশে রোগী যাওয়ার কারণ নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, সেসব থেকে জানা যায়, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট রয়েছে। চিকিৎসা ও নার্সিংয়ে অদক্ষতা, আন্তরিকতার অভাব এবং অপেশাদারির অভিযোগ আছে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনদের অনেকেই দেশের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ করেছে।
চিকিৎসকের কাছে গেলেই এক গাদা পরীক্ষার মুদ্রিত ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া, সেসব থেকে কমিশন পাওয়া, রোগ পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া, প্রয়োজন না থাকলেও আইসিইউতে ঢুকিয়ে দেওয়া, অত্যধিক বিল করাÑএমন অনেক অভিযোগই বহুল আলোচিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত গড়ে ৪৯.৫৪ শতাংশ মুনাফা করছে। ডেন্টাল ক্লিনিকগুলো সর্বোচ্চ ৯০.২৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে। বিদেশগামী রোগীদের কোনো কোনো স্বজনের বক্তব্য, দেশের চেয়ে ভারতে চিকিৎসায় খরচ কম পড়ে।
এ ছাড়া চিকিৎসায় ব্যক্তিগত ব্যয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে মোট ব্যয় ছিল ৭৭৭.৩ বিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যয় ৬৮.৫ শতাংশ। এটিও রোগীদের বিদেশগামী হতে উৎসাহিত করে। আবার ভুল চিকিৎসা, ভুয়া চিকিৎসকসহ বহু অনৈতিক ঘটনাও আছে।
সরকারি হাসপাতালে অযতœ ও অবহেলার অভিযোগ বেশি। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেম্বার কিংবা বেসরকারি হাসপাতালেই বেশি সময় দিতে দেখা যায়। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে এবং আস্থার সংকট বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানের আরো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা গেলে আর চিকিৎসা ব্যয় কিছুটা কমানো গেলে বিদেশগামী রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুশাসনের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মানোন্নয়নেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল বাদ দিলে বাকিগুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে থাকে। বিদ্যমান বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মানোন্নয়নেও পদক্ষেপ নিতে হবে।