অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

10

 

সভ্যতার প্রয়োজনে প্রযুক্তি এগোচ্ছে এবং তা এগোতেই থাকবে। জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার সঙ্গে আমাদের তাল মেলাতেই হবে। সেই প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়েও এসেছে।
কিন্তু যেকোনো প্রযুক্তির মতোই ডিজিটাল প্রযুক্তিরও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এ জন্য প্রযুক্তি দায়ী নয়, দায়ী প্রযুক্তির অপব্যবহার। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, দেশের ৫০ লাখ মানুষ অবৈধ জুয়ার সাইটগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল ডিভাইসে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার শুধু বাংলাদেশে নয়, উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশেই রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে হুন্ডি বা মুদ্রা পাচার হচ্ছে, অনলাইন বেচাকেনার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। ফটোশপে জোড়াতালি ছবি বানিয়ে কিশোরী, তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কৌশলে ভিডিও বানিয়ে বø্যাকমেইল করা হয়।
অবৈধ পর্নোগ্রাফির চর্চা চলে। এ রকম আরো বহু অপরাধই ঘটছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও ডিজিটাল অপরাধ বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনলাইন জুয়া। নানা কৌশলে মানুষকে প্রলুব্ধ করা হয় এসব জুয়ার সাইটে।
এর ফলে বহু পরিবার পথে বসছে। সপরিবারে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। আবার কিশোর-তরুণদের একটি অংশ জুয়ার অর্থ জোগাতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাÐে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে নানা ধরনের কর্মকাÐ পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দুই হাজার ৬০০ জুয়ার সাইট বøক করা হয়েছে। এসংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপগুলো বøক করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, অনলাইন জুয়াড়িরা প্রতিনিয়ত কৌশল বদলায়, নতুন নতুন নামে ওয়েবসাইট বানিয়ে তাদের অবৈধ কর্মকাÐ চালানোর চেষ্টা করে। অনলাইন জুয়া বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। মন্ত্রী জানান, তাঁরা সে চেষ্টাও করছেন।
বাংলাদেশ ডিজিটালি দ্রæত এগোচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেষ্টা চলছে। অপরাধীরাও এসব প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বেশি করে করতে থাকবে। এটাই বাস্তব। এই অপরাধ দমনে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে জুয়ার অ্যাপ। অনুমোদনহীন গেটওয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া সাইট বা নতুন সাইট ব্রাউজ করে জুয়া খেলা চলছে। অনলাইন ক্যাসিনোর সাইটগুলোর ডোমেইন দেশের বাইরে। নির্ধারিত সময় পর পর এসব সাইটের আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণকারীরা। নজরদারির মাধ্যমে গেটওয়ে এবং প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে অনলাইন জুয়া আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতা সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকাÐ বাড়াতে হবে।