শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন

12

 

শীতের তীব্রতা বাড়ায় গত কয়েকদিন ধরেই কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। ঘন কুয়াশা কেটে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। সোমবার মাঘের প্রথম দিন ঢাকাসহ কয়েকটি বিভাগে ওঠে সূর্য। কিন্তু আমলে নেওয়া দরকার, সপ্তাহের শেষে শীত ফের বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একদিকে শীতের প্রকোপে জনদুর্ভোগ এবং বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে; তেমনি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে যে, বাড়ছে শীতজনিত রোগও। সঙ্গত কারণেই শীতজনিত রোগ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
এটাও লক্ষণীয়, প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, রোগী বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এমনকি কোনো কোনো হাসপাতালে এক শয্যার বিপরীতে ১০ শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে। যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, মানুষ যেন সাবধানতা অবলম্বন করে, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যায় এবং চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে।
তথ্য মতে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাপক হারে যেমন বাড়ছে শীতজনিত রোগ, তেমনি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না যে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। জানা যাচ্ছে, প্রতিটি হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। ফলে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে। প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) প্রতিদিন ব্যাপক শিশু আসছে। এক্ষেত্রে এটা আমলে নেওয়া দরকার. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স্ক ও শিশুদের শীতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। শিশুদের শীতের পোশাক পরিধান করাতে হবে। সামান্য অবহেলার কারণে শিশুদের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গ্রামাঞ্চলে অনেকে শীতের জন্য গোসল করে না। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। এসব কারণে রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। অন্যদিকে, শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বাড়ছে শীতজনিত রোগ। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
আমরা মনে করি, মানুষকে কাজের প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হয়, কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ বাইরে না যায় সেই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে যে উদ্বেগ সেটি আমলে নিতে হবে। চিকিৎসকের মতে, শীতের সময় ধুলাবালি ও বাতাসের শুষ্কতা কমে যায়। এ কারণে শিশুদের চর্মরোগের পাশাপাশি চুলকানি বেশি হয়। বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সার্বিকভাবে, চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যাপক সতর্কতা। যা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধিতে জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নানাভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এর মধ্যে যখন বাড়ছে শীতজনিত রোগ, তখন সৃষ্ট অবস্থা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এমনটি কাম্য।