26

মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর সদরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীতে দ্রæত এগিয়ে চলছে দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজ নির্মাণ কাজ। প্রতিদিন শ্রমিকদের কাজ দেখতে আশপাশে ভিড় জমান কৌতুহলি জনতা। এ যেন স্বপ্ন পুরণ হতে চলছে। তবে কাজটি দ্রæত এগিয়ে নিতে নিয়মিত তদারকি করছেন জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তাদের শ্রমিকরা দ্রæত কাজ করছেন।
জানাগেছে, এক সময় জগন্নাথপুর উপজেলা ছিল দ্বীপের মতো অঞ্চল। দেশের কোথাও থেকে সরাসরি কোন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। মানুষ নৌকা যোগে চলাচল করতেন। তবে গত এরশাদ সরকারের আমলে সেই খর¯্রােতা নলজুর নদীতে প্রথম পাকা সেতু নির্মাণ হয়। এ সময় নদীর আরেকাংশে শহীদ মিনার এলাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে আরেকটি ছোট পাকা সেতু নির্মাণ হয়। এরপর থেকে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এগিয়ে যায় জগন্নাথপুর। প্রথমে জগন্নাথপুর-সিলেট ও পরে জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে যাবাহন চলাচল শুরু হয়। এভাবেই সারা দেশের সাথে জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা চলে আসছিল।
এর মধ্যে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এর প্রচেষ্টায় জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীতে সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ হওয়ায় আরেক ধাপ এগিয়ে যায় জগন্নাথপুর উপজেলা তথা পুরো সুনামগঞ্জ জেলাবাসী। এখন সুনামগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর হয়ে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচল করছে যানবাহন।
এরই মধ্যে কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা ও যাহবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নলজুর নদীতে থাকা দুইটি সেতু দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল বিঘœ ঘটে। সেতুগুলো সরু হওয়ায় দিনের পর দিন যানজট লেগেই থাকতো। সেই যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জোরালো হয়ে উঠে। অবশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এর প্রচেষ্টায় ১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজ নির্মাণ কাজ অনুমোদন হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা এলজিইডির অধীনে চলতি বছরের গত মার্চ থেকে শুরু হয় কাজ। টানা কয়েক মাস কাজ করার পর বর্ষায় নদীতে পানি আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩ মাস পর গত সেপ্টেম্বর থেকে আবারো দ্রæতগতিতে চলছে ফাইলিংয়ের কাজ।
২৩ অক্টোবর সোমবার দেখা যায়, শ্রমিকদের কাজ দেখতে আশপাশ এলাকায় ভিড় করেছেন কৌতুহলি জনতা। এ সময় পথচারীদের মধ্যে অনেকে বলেন, কবে আমাদের স্বপ্নের সেতু দিয়ে চলাচল করবো, এ আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছি। নতুন সেতুটি চালু হলে আমাদের সকল কষ্ট দুর হয়ে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র ৪টি ফাইলিং পিলার বসানোর কাজ রয়েছে। এরপর থেকে শুরু হবে মুল ব্রিজ নির্মাণ কাজ। ১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে গত মার্চে দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দ্রæতগতিতে আমাদের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আশা করছি, নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে-নতুন আর্চ ব্রিজের কাজ শুরু করতে গিয়ে আগের পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলা হলে নতুন করে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে শহীদ মিনার এলাকায় থাকা পুরনো দেবে যাওয়া ছোট সেতুকে আবার সচল করা হয়। পাশাপাশি হেলিপ্যাড থেকে সি/এ মার্কেট এলাকায় বিকল্প সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সাথে ভেঙে ফেলা সেতুর পাশে আরেকটি বাঁশের সেতু নির্মাণ হয়েছে। এসব বিকল্প পথ দিয়ে বর্তমানে মানুষ ও ছোট যানবাহন কোন রকমে চলাচল করছে।