টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ শহর বিপর্যস্ত

42

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা

টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ শহর বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এর ফলে শুক্রবার ভোর থেকেই শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। সকাল হতে হতে প্রায় সকল রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে।
এদিকে, শহরের বিভিন্ন এলাকার অনেক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই হোটেল ও আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া দোকানপাটের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় শহরের প্রায় সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। আর মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর প্রায় ১৫/১৬ ঘণ্টা শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সকাল থেকে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। পরে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয় এবং বৃষ্টি কিছুটা থামে।
এর আগে দুপুর ও বিকেলে হবিগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা যায়, হবিগঞ্জ শহরের কিছু উঁচু রাস্তাঘাট ছাড়া সব সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, সার্কিট হাউসের সামনে, শায়েস্তানগর এলাকায় শহরের প্রধান সড়কে যানবাহনের চাকা সম্পূর্ণ ডুবে যেতে দেখা যায়। ফলে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়িচালক এবং যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এছাড়া শহরের অনন্তপুর, ইনাতাবাদ, স্টাফ কোয়ার্টার, শ্যামলী, নোয়াহাটি, যশেরআব্দা, মাস্টার কোয়ার্টার, ঘোষপাড়া, ফায়ার সার্ভিস এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক ঘরে কোমর পর্যন্ত পানি উঠে আসবাবপত্র ভাসতে দেখা যায়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও কর্মকর্তাদের বাসভবনেও পানি প্রবেশ করেছে। সদর মডেল থানা, সার্কিট হাউস, গণপূর্ত কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকাও পানিতে ডুবে গেছে।
অনন্তপুর এলাকায় সাজ্জাদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে আমার বাসায় হুড়মুড় করে পানি ঢুকে পড়ে। নিমিষেই ঘরের ভেতর কোমর পানি হয়ে যায়। এ কারণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে হোটেলে ওঠতে হয়েছে। কিন্তু পানি ঢোকার কারণে বাসার আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে।
একই এলাকায় খালেক মিয়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার ঘরে আসবাবপত্র পানিতে ভাসছে। তিনিও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খালেক মিয়া বলেন, বৃষ্টি হলেই হবিগঞ্জ শহরের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে। রাস্তাঘাট নিমেষে তলিয়ে যায়। এই বছর এ নিয়ে তিনবার আমার ঘরে পানি ঢুকেছে। প্রতিবারই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা একেবারেই না থাকার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পানি যাওয়ার রাস্তা আটকে কয়েকজন মাছের চাষ করছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ কথা বলতে চায় না।
শহরের ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, শহরের রাস্তাঘাটগুলো অপরিকল্পিতভাবে উঁচু করা হচ্ছে। মেরামতের সময় পুরাতন পিচের ওপরে নতুন পিচ ঢেলে কাজ করার জন্য বাসা ও দোকান থেকে রাস্তা উঁচু হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার পানি দোকান ও বাসায় ঢুকে পড়ছে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুব দুর্বল।
হবিগঞ্জ শহরের এই জলাবদ্ধতার জন্য সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার সামনের রাস্তার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্বাস আলী জানান, তিনি প্রতিদিন এখানে আমড়া বিক্রি করেন। এ থেকেই তার ছয় সদস্যের পরিবার চলে। কিন্তু আজ রাস্তা ডুবে যাওয়ায় তিনি এক টাকাও আয় করতে পারেননি।
সামান্য বৃষ্টি হলেই হবিগঞ্জ শহরের রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশের জন্য নদ-নদী, খাল-বিল দখলকে দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীগণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত শহরের পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছি। নদীটির ধারা কোথাও কোথাও দখলের জন্য প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আন্দোলন করলেও প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। বরং উল্টো প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের অনেক জলাধার দখল করে ভরাট করা হয়েছে।
তোফাজ্জল সোহেল আরও বলেন, হবিগঞ্জ শহরের ভেতরে অনেকগুলো জলাধার ছিল। যে কারণে বৃষ্টি হলেও পানি জমে থাকত না। আমরা এসব নিয়ে অনেক আন্দোলন ও কর্মসূচি করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এখনো নড়ছে না। তাই সামনে হবিগঞ্জ শহরবাসীর জন্য মারাত্মক ভোগান্তি অপেক্ষা করছে।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম জানান, দ্রæত পানি নিষ্কাশন করার জন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর বর্জ্য ফেলে ড্রেন ভরাট না করতে ও নাগরিক সচেতনতার আহŸান জানানো হয়।